‘ময়নার কী হলোরে, ও আল্লাহ, ভাইয়ো, ও ময়না। ও সোনা একবার আও কররে। তুমি একবার অ্যানা আও করো পাখি, মুই অ্যানা চুমা খাওরে। আজকে থেকে সোনা গেল রে।’

গাছ কাটতে গিয়ে ডালের চিপায় পড়ে মারা যাওয়া শহিদুল ইসলামের (৪২) বোন রোকেয়া বেগম এভাবেই বিলাপ করছিলেন। রোববার (০২ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিকে জয়পুরহাটের কালাই থানা চত্বরে ভাইয়ের লাশের পাশে তাকে এভাবে বিলাপ করতে দেখা যায়।

এর আগে দুপুর ১২টার দিকে কালাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সদস্যরা সড়াইল মেসার্স এম ইসরাত হিমাগার লিমিটেড চত্বরের একটি মেহগনি গাছের ওপর থেকে থেকে শহিদুলের মরদেহ উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় ওই হিমাগারের ব্যবস্থাপককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। 

নিহত শহিদুল ইসলাম কালাই পৌরসভার পূর্ব সড়াইল এলাকার মৃত মফিজ উদ্দির ফকিরের ছেলে।

কালাই থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ওই হিমাগার চত্বরের ভেতর থাকা একটি  ইউক্যালিপটাস গাছের ওপরের অর্ধেক অংশ ভেঙে মেহগনি গাছের ওপর পড়ে মরে শুকিয়ে যায়। রোববার বেলা ১১টার দিকে শহিদুল ইসলামকে ইউক্যালিপটাস গাছের ওই শুকনা ডালটি কাটতে হিমাগারে ডেকে আনা হয়। শহিদুল ইসলাম গাছে উঠে ডাল কাটতে শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর পাশের মেহগুনির গাছের দুই ডালে তাকে ঝুলতে দেখে লোকজন পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন।  ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যারা প্রায় ৪৫ মিনিট চেষ্টা চালিয়ে লাশটি নিচে নামিয়ে আনেন। পরে লাশটি থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ হিমাগারে গিয়ে ব্যবস্থাপক রায়হান আলমকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। 

দুপুর আড়াইটার দিকে কালাই থানায় গিয়ে দেখা গেছে, নিহত শহিদুল ইসলামের মরদেহ থানার গোলঘরের সামনে রাখা হয়েছে। হিমাগারের ব্যবস্থাপক রায়হান আলমকে একটি কক্ষের ভেতর রাখা হয়েছে।  লাশের সামনে শহিদুল ইসলামের স্বজনরা কান্নাকাটি করছিলেন।

নিহত শহিদুল ইসলামের বড় বোন রোকেয়া বেগম বলেন, আমার ভাইকে গাছের ডাল কাটার জন্য ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমার ভাই গাছের ডাল কাটতে না গেলে মারা যেত না। প্রভাবশালীরা টাকা-পয়সা দিয়ে আপস-মীমাংসার প্রস্তাব দিচ্ছে।

নিহতের ভাতিজা সাদ্দাম হোসেন বলেন, শহিদুল আমার চাচা হলেও আমরা বন্ধুর মতো ছিলাম। হিমাগার এলাকায় সিসি ক্যামেরা আছে। সেখানে কেউ ঘাসও কাটতে পারে না। সেখানে গিয়ে গাছের ডাল কাটা সহজ নয়, তাকে অবশ্যই হিমাগার কর্তৃপক্ষের কেউ ডেকে নিয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে তারাই দায়ী।

এম ইসরাত হিমাগার প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক রায়হান আলম বলেন, শহিদুল ইসলামকে গাছের ডাল কাটার ডেকে আনা হয়নি। তিনি এমনিতেই হিমাগারের ভেতরে ঢুকে গাছের মরা ডাল কাটছিলেন।

কালাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের ইনচার্জ বজলুর রশিদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৪৫ মিনিটের ওপর চেষ্টা করে শহিদুলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি গাছের ডাল কাটতে গিয়ে পড়ে যান এবং দুটো ডালের মাঝে মাথা চাপা পড়ে সেখানেই মারা যান।

কালাই থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দীন বলেন, এম ইসরাত হিমাগারের একটি গাছের ওপর থেকে শহিদুল ইসলামের লাশ নামিয়ে আনেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা। স্থানীয় লোকজন হিমাগারের ব্যবস্থাপকের ওপর চড়াও হওয়ায় তাকে থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ থানায় এখনো অভিযোগ করেনি। হিমাগারের লোকজন নিহত শহিদুল ইসলামের পরিবার ঘটনাটি আপস-রফার চেষ্টা করছেন বলে জানতে পেরেছি।

চম্পক কুমার/আরএআর