রংপুরে হরিজন সম্প্রদায়ের এক সুইপারকে হোটেলে নাস্তা খেতে না দেওয়াসহ ধাক্কা মেরে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে হরিজন অধিকার আদায় সংগঠন। পুলিশ অভিযোগটি খতিয়ে দেখছে বলে জানা গেছে।

সুইপারকে নাস্তা খেতে বাধা দেওয়ার এ ঘটনাটি ঘটেছে রংপুর নগরীর ঐতিহ্যবাহি ‘মৌবন রেস্টুরেন্টে’। গত শনিবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সাড়ে সাতটার দিকে ঘটনাটি ঘটে বলে দাবি করেন হরিজন অধিকার আদায় সংগঠনের সভাপতি সুরেশ বাসফোর। 

ঘটনার দিন রাতেই রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় সংগঠনের পক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সুরেশ বাসফোরে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, হরিজন অধিকার আদায় সংগঠনের সদস্য ও রংপুর কেরামতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জীবন বাসফোর শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নগরীর কাচারি বাজারে মৌবন রেস্টুরেন্টে খেতে যান। এ সময় জীবনকে সেখানে ঢুকতে বাধা দেন রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারসহ কয়েকজন কর্মচারী। এ হোটেলে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনের খাবার খাওয়া নিষেধ জানিয়ে একপর্যায়ে জীবনকে ছোট জাত বলে আখ্যায়িত করেন তারা। এরপর তাকে গালিগালাজ ও ধাক্কা দিয়ে হোটেল থেকে বের করে দেওয়া হয়।

পরে ম্যানেজার পরিচয়ে আতিকুল নামে একজন হোটেলের মেমোতে ‘এই হোটেলে সুইপারের খাওয়া নিষেধ‘ লিখে স্বাক্ষর করে জীবনের হাতে ধরিয়ে দেন।

এদিকে হোটেলে বর্ণ বৈষম্যের শিকার ওই শিক্ষার্থীর পক্ষে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে হরিজন অধিকার আদায় সংগঠন। সোমবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে রংপুর নগরীর কাচারি বাজার চত্বরে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে মৌবন হোটেলে শিক্ষার্থী জীবন বাসফোর এর প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ ও খেতে না দেওয়ার প্রতিবাদ জানায় সংগঠনটির নেতারা।

মানববন্ধন থেকে বক্তারা বলেন, আজও স্বাধীন দেশে হরিজন জনগোষ্ঠীকে জাত-পাত, পেশা ও ভাষার কারণে বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে, যা এই সমাজ, রাষ্ট্র ও ব্যক্তি মানুষের বিকাশে বড় বাধা। দেশের উন্নয়নে হরিজন জনগোষ্ঠী বরাবরই ভূমিকা রাখলেও আজও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। 

হরিজন অধিকার আদায় সংগঠনের সভাপতি সুরেশ বাসফোর বলেন, স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী জীবনকে হোটেলের লোকজন ঢুকতে দেয়নি এবং মারধর করেছে। আমি এ ঘটনাটি জানতে পেরে হোটেলে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা আমার সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেন। আমি তাদের বলি যে, বাংলাদেশে কোথায় লেখা আছে যে, হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন হোটেলে খাবার খেতে পারবেন না। তখন তারা আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, হরিজন অধিকার আদায় সংগঠনের সহ-সভাপতি রাজু বাসফোর, সাধারণ সম্পাদক সাজু বাসফোর, সদস্য রাজা বাসফোর, উপদেষ্টা শবরন বাসফোর, লিটন বাসফোর প্রমুখ। এছাড়াও সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র রংপুর জেলার সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুন্নাহার খানম শিখা, বাসদ (মার্কসবাদী) রংপুর জেলার আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বাবলু প্রমুখ।

অভিযোগ প্রসঙ্গে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজার রহমান বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। উভয়পক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হচ্ছে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস