স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার কাকৈরগড়া ইউনিয়নের গোদারিয়া বাজার সংলগ্ন  বালচ নদীতে সেতু নির্মিত হয়নি। এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদী পারাপার হচ্ছেন ১৫ গ্রামের মানুষ। তবে নদী পারাপার হকে গিয়ে প্রায়ই নদীতে পড়ে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটছে।

স্থানীয়রা জানান, বালচ নদীর ওপর পাকা সেতু নির্মিত না হওয়ায় এলাকার লোকজন তাদের নিজেদের অর্থায়নে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে পারাপার হয়ে আসছেন। এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন কাকৈরগড়া ও বাকলজোড়া ইউনিয়নের গোদারিয়া, নাগপুর, গোপালপুর, বিলাশপুর, গোফিনাথপুর, সাংসা, গুজিরকোনাসহ প্রায় ১৫ গ্রামের মানুষ চলাচল করেন।

সাঁকোটি দিয়ে হেঁটে কোনো রকম পারাপার সম্ভব হলেও যানবাহন চলাচল করা একেবারেই কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত খাদ্যশস্য, কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন কাঁচামাল বাজারজাতকরণে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের। সাঁকো না থাকায় শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষ।

নদীর দুই পাড়ে রয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। স্থানীয়রা সাঁকো নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

স্থানীয় গোদারিয়া গ্রামের বাসিন্দা সোহাগ মিয়া বলেন, জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায় সাঁকো নির্মাণ করা হবে। কিন্তু নির্বাচনের পর আর কেউ আমাদের খোঁজ-খবর রাখে না। আমরা অনেক দিন ধরে বালচ নদীর ওপর একটি সাঁকোর স্বপ্ন দেখছি, কিন্তু আমদের স্বপ্ন আজ পর্যন্ত বাস্তবে পরিণত হলো না।

নাগপুর গ্রামের বাসিন্দা আজিজ মিয়া বলেন, সরকার দেশের কত জায়গায় কত উন্নয়ন করছে। কিন্তু আমাদের এলাকায় এই সাঁকোটি নির্মাণ আর হলো না। আমরা আর কত দিন কষ্ট করব এই সেতুর জন্য। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই আমাদের এই সেতুটি নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য।

স্থানীয় গোফিনাথপুর গ্রামের কৃষক আজিম খাঁ বলেন, একটি সাঁকোর অভাবে আমাদের জমি থেকে উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারজাত করতে খুব কষ্ট হয়। ফলে বাধ্য হয়ে বিকল্প রাস্তা দিয়ে কৃষি পণ্য নিতে দ্বিগুণ খরচ হয়। এতে আমরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হই।

স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এনামুল হক জানায়, বাঁশের সাঁকো পার হয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যেতে ভয় করে। তারপরও যেতে হয়। প্রধানমন্ত্রী আমাদের পড়ালেখার কথা চিন্তা করে এখান যেন একটি সেতু করে দেন।

কাকৈরগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাচ্চু তালুকদার বলেন, এই সেতুটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু। এই সেতু দিয়ে দুই ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করে। এখানে পাকা সেতু না থাকায় মানুষ অনেক দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিশেষ করে শিশু, শিক্ষার্থী ও নারীরা বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। আমরা বিভিন্ন মহলের সঙ্গে  যোগাযোগ করেছি সেতু নির্মাণের ব্যাপারে।

দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাজীব উল আহসান বলেন, বালচ নদীতে সেতু নির্মাণের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জিয়াউর রহমান/এসপি