উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী লক্ষ্মীপুরের রামগতির আবদুল অদুদ খানকে ৯টি মহিষ ও তার শ্বশুর নূর মোহাম্মদকে ৮টি মহিষ বুঝিয়ে দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। 

বুধবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে রামগতি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন মহিষগুলো উভয়পক্ষকে বুঝিয়ে দিয়ে আলোচিত মহিষ কাণ্ড ঘটনার সমাধান করে দেন।

মহিষের জিম্মাদার ও রামগতি উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন জসিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেন, ২৩ জুন হাইকোর্টের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড মহিষের মামলাটি সমাধান করে দিয়েছেন। সেখানে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৭টি মহিষের মধ্যে অদুদকে ৫টি বড় ও ৪টি ছোট মহিষ দেওয়া হয়েছে। তার শ্বশুর নুর মোহাম্মদকে ৬টি বড় ও ২টি ছোট মহিষ বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

থানা পুলিশ সূত্র জানায়, অদুদ উপজেলার আলেকজান্ডার ইউনিয়নের সুজন গ্রামের বাসিন্দা ও সৌদি প্রবাসী ছিলেন। ২০১১ সালে ৫টি গরু ও ৮ টি মহিষ কিনে অদুদ তার শ্বশুর চরআলগী ইউনিয়নের চর নেয়ামত গ্রামের নুর মোহাম্মদের কাছে লালন-পালন করতে দেন। ২০১৯ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ৯ বছরে গরু ও মহিষগুলোর বাছুর জন্ম নেয়। এতে বৃদ্ধি পেয়ে ৭টি গরু ও ২০টি মহিষ হয়। দেশে ফেরার পর গরু ও মহিষগুলো চাইলে অদুদের শ্বশুর দিতে অস্বীকার জানায়। এতে ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি (অদুদ) বাদী হয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (রামগতি) আদালতে মামলা দায়ের করেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল ইসলাম মামলাটি তদন্তের জন্য রামগতি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়। এর অনুলিপি চরবাদামের ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন জসিমকেও দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রামগতি থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মজিবুর রহমান তফাদার ১৭টি মহিষ ও ৫টি গরু নুর মোহাম্মদের কাছ থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। একই বছরের ৪ মার্চ তিনি গরু উদ্ধারের পর মহিষ ও গরুগুলো লালন-পালনের জন্য চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেনের জিম্মায় রাখা হয়। এ নিয়ে ওইদিন তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে প্রতিবেদনও দাখিল করেন।

আদালতের নির্দেশে গত ৮ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান জসিম ৫টি গরু অদুদকে ফেরত দেন। কিন্তু মহিষগুলো ফেরত দেননি। প্রায় ১০ লাখ টাকা মূল্যের মহিষগুলো ফেরত দিতে চেয়ারম্যানকে ওই বছর ১৯ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের আইনজীবী মুহাম্মদ রহমত উল্যাহ বিপ্লব লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। এরপর দু’বার পুলিশ ওই চেয়ারম্যানকে মহিষগুলো ফেরত দিতে নোটিশ করেন। তাতেও তিনি দেননি। সর্বশেষ চলতি বছরের ৩১ মার্চ মহিষগুলো ফেরত দিতে আদালতের আদেশক্রমে এসআই মজিবুর রহমান ফের নোটিশ দেয়। এতেও চেয়ারম্যান মহিষগুলো ফেরত দেয়নি। নিন্ম আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে আবেদন করেন শ্বশুর। লক্ষ্মীপুরের দায়রা জজ মো. রহিবুল ইসলাম ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ বহাল রাখেন। সেই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আসেন শ্বশুর।

পরে মামলার বিষয়বস্তু শোনার পর বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ সালিসের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য উভয়পক্ষকে নির্দেশ দেন। দায়িত্ব দেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসকে। 

২৩ জুন চার ঘণ্টা ধরে চলা সালিস বৈঠকের পরই বিরোধ নিষ্পত্তি হয় জামাই-শ্বশুরের। সালিসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৭টি মহিষের মধ্যে ৫টি বড় ও ৪টি ছোট মহিষ পাবেন অদুদ। আর ৬টি বড় ও ২টি ছোট মহিষ নেবেন শ্বশুর। বিরোধ নিষ্পত্তির এ সিদ্ধান্ত এখন অবহিত করা হবে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চকে।

রামগতি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শ্বশুরকে ৮টি ও জামাইকে ৯ টি মহিষ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরমধ্যে আলোচিত এ ঘটনার সমাধান হলো। তাদেরকে মিলেমিশে থাকার জন্য বলা হয়েছে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এমএএস