বরিশাল মহানগর বিএনপির ওয়ার্ড কমিটি গঠন নিয়ে একের পর এক অভিযোগ উঠছে স্থানীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে। মোট ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৪টির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর সবগুলো ওয়ার্ডের কমিটি গঠন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। 

মহানগরের নেতারা দাবি করেছেন, দলের দুঃসময়ে যাদের সক্রিয় পেয়েছেন, তাদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

তবে ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দ বলছেন, যুবদল, শ্রমিকদলের লোক দিয়ে বিএনপির কমিটি গঠন করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মহানগরের নেতাদের স্বার্থ হাসিল যারা করতে পারবেন, তারাই পদ পেয়েছেন।

এর আগে গঠিত কমিটি নিয়ে ভেতরে ভেতরে অসন্তোষ থাকলেও বুধবার (৫ অক্টোবর) ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ করেছেন ২৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা কমিটি বাতিলের দাবি জানান। বিকেল ৪টায় নগরীর সাগরদী পুল এলাকা থেকে মিছিলটি ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে রুপাতলী বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে চান্দু মার্কেটে গিয়ে শেষ হয়। সভায় বক্তব্য দেন ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন মিন্টু, মো. নুরুল ইসলাম, মো. মিজানুর রহমান সরদার প্রমুখ।

এদিকে ওয়ার্ড কমিটি গঠনে মহানগরের আহ্বায়ক-সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে পদ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন একাধিক যুগ্ম আহ্বায়ক ও টিম লিডাররা।

মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন বলেন, মহানগরের নতুন নেতৃবৃন্দ যাদের দিয়ে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করছেন, তাদের অনেককে বিএনপির নেতা-কর্মীরাই চেনেন না। মূলত কাউন্সিলে বেশি ভোট পাওয়ার জন্য মহানগরের আহ্বায়ক-সদস্য সচিব ত্যাগী কর্মীদের উপেক্ষা করে তাদের নিজের অনুসারীদের দিয়ে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করছেন।

মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান টিপু বলেন, কমিটি গঠনে আমাকে যে ইউনিটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেখানে নতুন কমিটি গঠনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা মানা হয়নি। কেন মানা হয়নি তা আমি নয়, মহানগরের আহ্বায়ক-সদস্য সচিব বলতে পারবেন।

আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভার্চুয়াল সভায় স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন অঙ্গ-সংগঠনের কাউকে ওয়ার্ডের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করা যাবে না। ক্ষেত্র বিশেষ সদস্য করা যেতে পারে। বিশেষ প্রয়োজনে ওয়ার্ডের যুগ্ম আহ্বায়ক করা যেতে পারে। ঘোষিত ১৪টি ওয়ার্ড কমিটির প্রতিটিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এই নির্দেশনা উপেক্ষা হয়েছে। টিম লিডারদের প্রস্তাবিত কমিটি বাদ দিয়ে আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ পদ দেওয়া হয়েছে।

২৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, সদ্য ঘোষিত কমিটি ব্যক্তি স্বার্থের কমিটি। এটি দলের স্বার্থে করা হয়নি।

যদিও অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করেছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক। তিনি বলেন, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আমরা যাদেরকে মাঠে পেয়েছি, যারা আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে ছিলেন তাদেরকে মূল্যায়ন করেছি। বিএনপি একটি পুরাতন দল। সবাইকে খুশি করা সম্ভব নয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে বাকিরাও পদ পাবেন। সকলকে নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে। পদ-পদবি না পেলে নেতা-কর্মীরা অভিযাগ করতেই পারেন। 

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর মনিরুজ্জামান ফারুককে আহ্বায়ক ও মীর জাহিদুল কবিরকে সদস্য সচিব করে গঠিত তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিকে চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি ৪২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি হিসেবে অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। ১১ মার্চ নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। ৩০টি ওয়ার্ডে কমিটি গঠনে মহানগর বিএনপির ৬ যুগ্ম আহ্বায়ক ও একজন সদস্যকে প্রধান করে ৭টি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়। ওয়ার্ড কমিটি গঠনে শুরু থেকেই বিরোধিতার মুখে পড়েন মহানগরের আহ্বায়ক-সদস্য সচিব।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর