ফাইল ছবি 

মেঘের রাজ্য খ্যাত রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে রিসোর্ট-কটেজ খালি না পেয়ে গাড়িতে এবং কটেজের বারান্দায় রাত কাটিয়েছেন পর্যটকরা। রিসোর্ট ও কটেজগুলোর ধারণক্ষমতার বেশি পর্যটক সাজেকে যাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। 

বুধবার (৫ অক্টোবর) বাঘাইছড়ি উপজেলার নন্দারাম নামক স্থানে পাহাড় ধসে সাজেকের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আকষ্মিক সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েন সাজেকে বেড়াতে আসা পর্যটকরা। দুপুর আড়াইটার কিছু পরে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় জনগণের সহায়তায় মাটি সরিয়ে রাস্তা চালু হলেও ততক্ষণে সড়কের দুই পাশেই পর্যটকদের অসংখ্য গাড়ি আটকা পড়ে। 

এদিকে সড়ক চালু হলেও সাজেকে অবস্থানরত অনেক পর্যটকই তাদের ফিরতি যাত্রা বাতিল করে রিসোর্টগুলোতে অবস্থান করায় সাজেকে প্রবেশ করা নতুন পর্যটকরা রুম খালি না পেয়ে অবশেষে গাড়িতে, রিসোর্টগুলোর বারান্দায়, প্রাইমারি স্কুলের কক্ষে রাত্রিযাপন করেন। 

সাজেক রুংরাং রিসোর্টের ব্যবস্থাপক মো. ফয়সাল বলেন, সাজেকে মোট ১১২টি কটেজ আছে। যেখানে প্রায় ৪ হাজারের মতো পর্যটক থাকতে পারেন। কিন্তু বুধবার (৫ অক্টোবর) প্রায় ৫ হাজারের বেশি পর্যটক সাজেক এসেছেন। এতে রিসোর্টগুলোতে কক্ষ সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে অনেক পর্যটক বারান্দায় রাত কাটিয়েছেন।

মেঘপুঞ্জি রিসোর্টের ব্যবস্থাপক পুষ্প চাকমা বলেন, আমাদের রিসোর্টের রুমগুলো অনেক আগে থেকেই নভেম্বর পর্যন্ত বুকড হয়ে আছে। অনেকের কাছ থেকেই শুনেছি পর্যটকরা রুম পাননি এবং এলাকার প্রাইমারি স্কুলে রাত কাটিয়েছেন। আর আমিও সকালে আমার আশপাশের রিসোর্টগুলোর বারান্দায় বিছানা পেতে ঘুমাতে দেখেছি।

মেঘকাব্য হিলটপ কটেজের ব্যবস্থাপক আদিব চাকমা বলেন, গতকাল যেসকল পর্যটক আসার কথা ছিল তারা রাস্তায় পাহাড় ধসের কারণে দুপুর ১টার পরিবর্তে বিকেল ৩টায় এসেছেন। অনেক পর্যটক সাজেক ছেড়ে যাননি, তাই রুম সংকট দেখা দিয়েছে। 

আরও পড়ুন : পাহাড় ধসে সাজেকে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ, হাজারো পর্যটক আটকা

তবে পর্যটকদের গাড়িতে রাত কাটানোর বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, রুম সংকট ছিল সেটা সত্যি তবে আমি যতটুকু জানি রাতের মধ্যেই সেটা সমাধান হয়ে গেছে। যারা রুম পাননি তারা অনেকে গেস্টদের অনুরোধ করে রুমের বাইরে বারান্দায় ছিলেন। যেসক পর্যটক আমাদের কটেজে এসে রুম না পেয়ে ফেরত গেছেন তাদের সঙ্গে যখন আমার রাতে আবার দেখা হয়েছে, তখন তারা জানিয়েছেন তারা রুম পেয়েছেন।

সাজেক জিপ মালিক সমিতির লাইনম্যান ইয়াসিন আরাফাত বলেন, গতকাল প্রায় ৩০০ গাড়ি ঢুকেছে। তাই পর্যটকদের চাপ ছিল প্রচুর। কিন্তু রাস্তায় রাত কাটাতে দেখিনি কোনো পর্যটককে। হয়তো অনেককেই কটেজের বারান্দায় থাকতে হয়েছে। আজ ১১টার পর ১৫০টির মত গাড়ি সাজেক ছেড়ে যাবে। তবে তিন দিনের ছুটির কারণে আরও নতুন পর্যটক প্রবেশ করবে। 

৩৬ নং সাজেক ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নেলশন চাকমা বলেন, আসলে টানা ছুটির কারণে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পর্যটক এসেছে সাজেকে। রুম না পেয়ে অনেক পর্যটক বাইরে থেকেছে এবং অনেকে চলেও গেছে। আমাদের অনেক পরিচিত রুম নিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, কিন্তু আমরা কটেজ-রিসোর্টে রুম নিয়ে দিতে পারিনি।

বাঘাইহাট থেকে প্রতিদিন সকালে পুলিশ প্রহরায় পর্যটকদের গাড়ি সাজেকে রুইলুই পাড়া পর্যটন কেন্দ্রে পৌঁছায়। অনেক পর্যটক দিনে গিয়ে দিনে ফেরত আসেন। কিন্তু গতকাল বাঘাইহাট-সাজেক সড়কের নন্দারাম এলাকায় পাহাড় ধসের কারণে পর্যটকরা আটকা পড়েন এবং সাজেক থেকে ফেরত আসতে পারেননি। 

সাজেক কটেজ মালিক সূত্রে জানা যায়, যেহেতু প্রশাসনের নিয়ম অনুযায়ী বেলা ১১টার আগে কোনো পর্যটকবাহী গাড়ি সাজেক ত্যাগ করা নিয়ম নেই, তাই বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) সকাল থেকে এখনো কোন পর্যটকবাহী গাড়ি ছেড়ে যায়নি। তাই কী পরিমাণ পর্যটক আজ সাজেক ত্যাগ করবেন তা ১১টার পরই জানা যাবে।

মিশু মল্লিক/আরএআর