গত সাত বছর ধরে ৬৫টি শূন্য পদ নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়। গত বছরের ডিসেম্বরে শূন্য পদ পূরণের লক্ষ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত ৯ মাসেও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করতে পারেনি জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়। ফলে যোগ দিতে পারেননি ৬৫ জন জনবল। এতে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার ৩৪টি ইউনিয়নের মানুষ। 

জেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়োগ প্রক্রিয়ার সভাপতি জেলা প্রশাসক। নিয়োগের সব প্রক্রিয়া শেষ করে ডিসি অফিসে জমা আছে। তিনি চাইলেই যে কোনো মুহূর্তে মৌখিক পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে শূন্য পদগুলো পূরণ করতে পারবেন। অফিশিয়ালি সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করা আছে। এর আগে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর লিখিত পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। সেই রাতেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ৩২৫ জনের মেধা তালিকা প্রকাশ করে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়। 

জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ৩৪টি ইউনিয়নে প্রায় সাত বছর থেকে ৬৫টি পদ শূন্য রয়েছে। শুধু তাই নয়, ৫টি উপজেলায় ২০ পরিদর্শক থাকার কথা, সেখানে রয়েছে মাত্র তিনজন। এতে পরিবার পরিকল্পনা অফিসের সেবা  চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। 

জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মাকিন ঢাকা পোস্টকে জানান, সর্বশেষ ২০১৫ সালে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর আর কোনো জনবল নিয়োগ হয়নি জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে। ১৯৯৬ সালের জরিপ অনুযায়ী একজন কল্যাণ সহকারী ৯০০টি পরিবারে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে বর্তমানে তাকে ১৫০০-১৭০০ পরিবারে দায়িত্ব পালন করতে হয়। 

তিনি আরও জানান, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে কর্মরত পরিবার কল্যাণ সহকারীদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর বাইরে জনবলের ঘাটতি থাকায় অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। যা পালন করা অসম্ভব। এতে শূন্য পদে সংশ্লিষ্ট এরিয়াগুলোর পরিবার কল্যাণ সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরিবার পরিকল্পনা সহকারী, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক, পরিবার কল্যাণ সহকারী ও আয়া মোট ৪টি পদে ৬৫ জনকে নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যে ২০২১ সালের ২২ জুলাই থেকে ২৬ জুলাই আবেদন আহ্বান করা হয়। সেখানে পরিবার পরিকল্পনা সহকারী ও পরিদর্শকের চারটি পদে শুধু পুরুষরা আবেদন করেন। কল্যাণ সহকারী পদে ৫৯ এবং আয়া পদে ২ জন শুধুমাত্র মহিলা প্রার্থী আবেদন করতে পারেন। 

গত ২৪ ডিসেম্বর ৬৫টি পদের বিপরীতে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৩২৫ জন চাকরিপ্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য তালিকা প্রকাশ করে। পরে ২৭ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজের সভাপতিত্বে ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়। ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল এখনো প্রকাশিত হয়নি।

পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চাকরিপ্রত্যাশী ঢাকা পোস্টকে বলেন, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষা দেওয়ার পর আমরা দীর্ঘ ৯ মাস ধরে অপেক্ষায় আছি। এই চাকরির ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে আমাদের ভবিষ্যৎ। এই ফলাফল না পাওয়ার কারণে অন্য কোনো কাজেও যোগ দিতে পারছি না। দোটানায় রয়েছি আমরা। কখন ফলাফল দেবে কেউ বলতে পারছেন না। আদালতে রিটের কারণে দেরি হওয়ার অযুহাত দেখালেও গত প্রায় ৪ মাস আগেই রিট প্রত্যাহার করা হয়েছে। 

তৎকালীন চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বে আছেন মঞ্জুরুল হাফিজ। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কল্যাণ সেবা ব্যাহত হচ্ছে, এ জন্যই মূলত ভাইভা ও লিখিত পরীক্ষার মার্কের ওপর ভিত্তি করে যোগ্যতার ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছিল খুব কম সময়ের মধ্যে। এরপর বদলিজনিত কারণে সেটার ব্যাপারে আর আপডেট জানা নেই। 

এ নিয়োগ পরীক্ষার সদস্য সচিব ও জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আব্দুস সালাম ঢাকা পোস্টকে জানান, তৎকালীন জেলা প্রশাসক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গেছেন। বাগেরহাটের এক কল্যাণ সহকারী নিয়োগ বিধি নিয়ে আদালতে একটি রিট করেছিলেন। এ জন্যই চূড়ান্তভাবে রেজাল্ট প্রকাশ করতে বিলম্ব হয়। তবে প্রায় চার মাস আগেই রিটটি প্রত্যাহার করে নেন বাদী। এরপর অধিদপ্তর থেকে নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। 

তিনি আরও জানান, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী এ বিষয়ে গত মাসেই একটি মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সব কিছু ডিসি অফিসে পাঠানো হয়েছে। শুধু বর্তমান ডিসি চাইলেই যেকোনো সময় ফলাফল প্রকাশ করতে পারবেন। এখন অফিশিয়ালি ফলাফল প্রকাশে আর কোনো বাধা নেই।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরীক্ষাটি আগের জেলা প্রশাসক দায়িত্বে থাকাকালে হয়েছিল। এ নিয়ে সম্ভবত আদালতে একটি রিট আবেদন করা ছিল। তাই ফলাফল ঘোষণা ঝুলে আছে। আদালতের নির্দেশনা মেনে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

জাহাঙ্গীর আলম/আরএআর