কৃষকের জমি থেকে মাটি কাটতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দুই ঘণ্টা ইউএনও’র কক্ষে ইউপি সদস্যকে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় তাকে জুম্মার নামাজও পড়তে দেওয়া হয়নি। শুক্রবার (০৭ অক্টোবর) দুপুর ১টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। 

ভুক্তভোগী খলিলুর রহমান ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৪ নং হলিধানী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য। 

খলিলুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্থানীয় কাতলামারী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জসহ দুই পুলিশ সদস্য সদর থানার ওসির কথা বলে আমাকে থানায় নিয়ে আসে। দুপুর ১টার দিকে থানা থেকে নিয়ে যাওয়া হয় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে। সেখানে উপস্থিত উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম শাহীন আমাকে গালমন্দ করেন এবং এক পর্যায়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন। 

তিনি আরও বলেন, অফিস কক্ষের দরজা বন্ধ করে একজন আনসার সদস্যকে পাহারায় রেখে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার। জুম্মার নামাজের সময় মসজিদে যেতে দেওয়া হয়নি আমাকে। 

তিনি বলেন, দুই ঘণ্টা ইউএনওর কক্ষে আটকা ছিলাম। খবর পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সাদ আহম্মেদ, ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম ও শন্তোষ কুমার ছুটে আসেন উপজেলা পরিষদে। পরে বিকেল ৩টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম শাহীন নিজ কার্যালয়ে আসেন। দীর্ঘ আলোচনার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় আমাকে। 

আটকে রাখার বিষয়ে ইউপি সদস্য বলেন, আমার এলাকার গাড়ামারা গ্রামের সোনালী খাল (রাজরাম খাল) পাড়ে কৃষকের ফসলি জমি থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পাঠানো মাটি ব্যবসায়ীরা মাটি কাটতে গেলে এলাকার লোকজন বাধা দেয়। শুক্রবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ঘটনায় আমাকে দায়ী করে পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে আসে। এরপর ইউএনও তার কক্ষে আটকে রাখে।

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সাদ আহম্মেদ ও ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তারা অভিযোগ করেন, এলাকার চিহ্নিত প্রভাবশালী মাটিখোরদের কাছে কৃষকদের ফসলি জমির মাটি বিক্রি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা মাটি কাটতে বাধা দিয়েছে। ইউপি সদস্যকে পুলিশ দিয়ে ধরে আনেন ইউএনও এসএম শাহীন। এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ জড়িত ব্যক্তির বিচার দাবি করেন তারা।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম শাহীন ইউপি সদস্যকে আটকে রাখার ঘটনা অস্বীকার করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার মাটি, আমি কাটতে বলেছি, তাতে বাধা দিয়েছে ওই ইউপি সদস্য। এর কারণ জানতে তাকে ডেকে আনা হয়েছিল। 

ইউএনও আরও বলেন, জেলা স্কাউট ভবনের মাঠে মাটি ভরাট করার জন্য ভ্যাকু মেশিন, ছয়টি ট্রাক্টর ও ট্রলি পাঠানো হয়। এর আগে মেম্বর খলিলুর রহমানের সঙ্গে উপজেলা কার্যালয়ের নাজির জাহাঙ্গীর হোসেন কথা বলেন। এরপরও মাটি কাটতে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। খালের মাটির ঢিবিতে কৃষকের ফসল আছে এমন খবর জানা ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।

সরেজমিনে গেলে কৃষকরা বলেন, চিহ্নিত মাটিখোর জসিম উদ্দিন, আলাউদ্দিন ও তার সহযোগীরা ভ্যাকু মেশিন, ট্রাক্টর, ট্রলি দিয়ে মাটি কাটার চেষ্টা করে। এ সময় তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাটি কাটতে বলেছেন বলে জানায়।

তারা আরও বলেন, কয়েক মাস আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদারের মাধ্যমে গাড়ামারা গ্রামের সোনালী খাল (রাজরাম খাল) খনন করেছে। সে সময় খনন করা মাটি কৃষকদের ফসলি জমিতে স্তূপ করে রাখা হয়। শত শত বিঘা জমি মাটিতে ঢেকে যায়। চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন ওই এলাকার শত শত কৃষক। নিরুপায় হয়ে অনেকেই নিজ উদ্যোগে মাটি সমান করে চাষ শুরু করেছেন। কেউ কেউ মাটির উঁচু ঢিবিতেই মুগডাল চাষ করেছেন।
  
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম বলেছেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে।

আব্দুল্লাহ আল মামুন/এসপি