ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের নির্দোষ দাবি করে মানববন্ধন করেছেন আসামিদের স্বজনরা। তারা নুসরাত হত্যা মামলা পুনরায় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। 

শনিবার (৮ অক্টোবর) সকালে সোনাগাজী পৌর শহরের জিরো পয়েন্টে ‘সোনাগাজীর সর্বস্তরের সচেতন জনগণের’ ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের হাতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন দেখা যায়। এছাড়াও এতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের নির্দোষ দাবি করে নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের বিরুদ্ধে লেখা নানা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। 

মানববন্ধনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি উম্মে সুলতানা পপির বাবা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, পিবিআই প্রধান বনজ কুমার, পিবিআই ফেনীর প্রধান শাহ আলমের প্রতিহিংসার শিকার আমার মেয়ে। আমার মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে। এই মামলা পুনরায় তদন্ত করার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ করছি। 

মানববন্ধনে নুসরাত হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিনের অনুসারীরাও সরব ছিলেন। সোনাগাজী সরকারি ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহজাহান সাজু বলেন, পিবিআইয়ের মাধ্যমে ভুয়া তদন্ত রিপোর্ট দিয়ে আত্মহত্যাকে হত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। নাটক করে ১৬ জন নির্দোষ মানুষকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিনকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার অনুপস্থিতিতে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ ধ্বংসের পথে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।

সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক আফসার উদ্দিনের মুক্তির দাবিতে শিক্ষার্থীরাও মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে। মামলাটি পুনরায় তদন্তের দাবি জানায় তারা। 

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহানকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।

এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচ জনকে আসামি করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।

নুসরাত হত্যা মামলায় পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ২১ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে ওই বছরের ২৯ মে ১৬ জনকে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই। 

২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর নুসরাত হত্যা মামলায় ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদরাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।

আরএআর