বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি

‘হঠাৎ গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়, সঙ্গে বিদ্যুৎ চমকাতে থাকে। এ সময় অন্য শ্রমিকরা তড়িঘড়ি করে ইটভাটার একটি টিনের ঘরে আশ্রয় নিলেও চারজন শ্রমিক গাড়িতে ইটবোঝাই করেই যাচ্ছিলেন। কয়েকজন তাদের কাজ করতে বারণ করলেও কারো নিষেধ শোনেননি তারা। হঠাৎ করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিকট শব্দে বজ্রপাত শুরু হলে ওই চারজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। পাশেই জমিতে ঘাস কাটতে থাকা জলিল মিয়া নামে এক কৃষকও গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনিও মারা যান। হয়তো টিনের ঘরে আশ্রয় নিলে তারা সবাই বেঁচে যেতেন। এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটতো না।’  

মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কথাগুলো বলছিলেন টিনের ঘরে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের মমিন মিয়া।

এর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বত্রিশ মাইল বিটিসি এলাকার বকুল ব্রিকস নামের ইটভাটায় বজ্রপাতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়।  

হাসান সর্দার নামে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, চোখের সামনে এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর। আর যারা মারা গেছেন সবাই যুবক। তবে টিনের ঘরের মধ্যে আশ্রয় নিলে এ দুর্ঘটনা ঘটতো না। 

এদিকে ঘটনার পরপরই মৃতদের মরদেহ স্বজনরা বাড়িতে নিয়ে যান। একসঙ্গে পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় মৃতদের বাড়িতে বাড়িতে চলছে মাতম। স্বজন হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তাদের রোজগারেই চলতো সংসার। এ ঘটনা কোনোভাবেই মানতে পারছেন না স্বজনরা।

মৃতরা হলেন- ইটভাটায় ইটটানা ট্রলি শ্রমিক গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের তিলকপাড়া গ্রামের বাদশা মিয়ার ছেলে নাজমুল ইসলাম (২০),  ইদিলপুর ইউনিয়নের চকনদি গ্রামের শিরুল মিয়ার ছেলে সিয়াম মিয়া (২৩), আল-আমিনের ছেলে শাহাদত মিয়া (২২),  আয়নাল মিয়ার ছেলে রাশেদুল ইসলাম (২৮) ও কবিলপুর সোনাতলা গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে আব্দুল জলিল (৬২)। 

মৃত নাজমুল ইসলামের ভাই আতোয়ার মিয়া বলেন, ইটভাটায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো নাজমুল। প্রতিদিনের মতো ইটভাটায় কাজ করতে যায় নাজমুল। দুপুরের পর বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। 

মৃত রাশেদুল ইসলামের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, স্বামীর রোজগারে কোনো রকমে সংসার চলতো। বাড়ি ছাড়া আমাদের কোনো জায়গা-সম্পদ নাই। এখন স্বামী মারা যাওয়ায় দুই শিশু সন্তান নিয়ে কীভাবে দিন চলবে। 

চক নদী গ্রামের আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, একসঙ্গে পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় পুরো ইউনিয়নে শোক বিরাজ করছে। মৃত সবাই শ্রমজীবী। তাদের আয়ে চলতো সংসার। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে সবাই এখন দিশেহারা। এজন্য প্রত্যেক পরিবারকে সরকারি সহায়তার দাবি জানান তিনি।  

এ বিষয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রাণী রায় জানান, ইটভাটায় বজ্রপাত ঘটনাস্থলেই চার শ্রমিক এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে এক কৃষক মারা যান। তাদের সবার বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায়।
 
এদিকে সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকসানা বেগম বলেন, এ ঘটনার সংবাদ আমরা পেয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। মৃতদের দাফন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মৃতদের পরিবারের জন্য সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে।

রিপন আকন্দ/আরএআর