পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলছে বান্দরবান‌ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানকার বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশ-বিদেশে চাকরি করছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর হাজারো নারী-পুরুষ। স্থানীয় বেকার যুবকরাও প্রশিক্ষণ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজ করে দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি বান্দরবান‌ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। সেই থেকে পিছিয়ে পড়া পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন কেন্দ্রের প্রশিক্ষকরা। এ প্রতিষ্ঠানটি পাহাড়ের শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীদের কারিগরি শিক্ষায় গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। 

কারিগরি প্রশিক্ষকরা জানান, এই প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ট্রেড কোর্সের মধ্যে স্বনির্ভর, ভাষা শিক্ষা, এসইআইপি, ভোকেশনাল এসএসসি, মোটর ড্রাইভিং, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, গার্মেন্টস, আরএসিসহ বিভিন্ন ভাষার প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। কোর্সগুলোর মধ্যে অন্যতম জাপানি ভাষা, হংকংয়ের ভাষা। এখানে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্সের ওপর ৩ মাস, ৪ মাস ও ৬ মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বান্দরবান‌ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষক রোকেয়া রহমান বলেন, এখানে শিক্ষার্থীরা হাউসকিপিংয়ের ওপর তিন মাস প্রশিক্ষণ নেয়। প্রশিক্ষণ শেষে বিদেশে যাওয়ার জন্য তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়। বিদেশে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের থাকা-খাওয়া সম্পূর্ণ ফ্রি। বিদেশে যেতে হলে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকার মতো লাগে। তাদের সে টাকাগুলো দেওয়ার সামর্থ্য না থাকলে আমরা ব্যাংক লোনের মাধ্যমে হংকং যেতে সহযোগিতা করছি। 

বান্দরবান কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া হ্লা‌চিং মারমা ব‌লেন, কারিগরি প্রশিক্ষণ থেকে হাউসকিপিং ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে হংকংয়ে কর্মরত আছি। পারিবারিকভাবে আমি এখন সচ্ছল। 

ড্রাইভিং ট্রেডে প্রশিক্ষণ নেওয়া বাদশা মিয়া বলেন, কারিগরি প্রশিক্ষণ থেকে আমি ড্রাইভিং কোর্সে প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে পাহাড়ের একজন দক্ষ ড্রাইভার হিসেবে গাড়ি চালাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমি একটা গাড়ি কিনেছি এবং আমি স্বাবলম্বী হয়েছি।

বান্দরবান কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী পলাশ কুমার বড়ুয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে বান্দরবান কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিভিন্ন কোর্সে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে আস‌ছি। যেমন মোটর ড্রাইভিং, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, গার্মেন্টস, আরএসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। এ বছর আমাদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ছাত্র-ছাত্রী বিআরটিএর মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্গম হাওয়ায় প্রশিক্ষণার্থীদের হোস্টেলে থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী ও জেলা প্রশাসক আমাদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। প্রশিক্ষণের মান উন্নয়নে শিক্ষক-স্বল্পতা ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রশিক্ষণার্থীদের যাতায়াতের জন্য একটি গাড়ি প্রয়োজন। যা পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী অবগত আছেন। আমাদের বিদ্যমান এ সমস্যাগুলোর সমাধান হলে আমি আশা করি আমাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি পাবে এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী আরও এগিয়ে যাবে। 

আরএআর