একের পর এক নিষেধাজ্ঞা লাইগ্গাই থাকে। কয়দিন আগে গেল ৬৫ দিন। এহন আবার ২২ দিন। এই সময় আমরা জেলেরা বেকার হইয়া যাই। সহায়তায় চাউল পাই ঠিকই, তয় যহন পাই তহন পরানে কিছু থাহে না। এইবারের নিষেধাজ্ঞার ৭ দিন হইয়া গেলেও আমরা এহনো চাউল পাই নাই। আধপেটা খাইয়া বউ বাচ্চা লইয়া জীবন চালাই। এহন ক্ষুধার সময় খাইতে না পারলে পরে চাউল দিয়া করমু কি! আক্ষেপ নিয়ে এমনটাই বলছিলেন বরগুনা সদর উপজেলার মোল্লারহোরা গ্রামের আলমগীর বিশ্বাস। 

শুধু আলমগীর বিশ্বাসই নয়, এমন অভিযোগ বরগুনার সকল জেলেদের। একই এলাকার আরও কয়েকজন জেলে বলেন, সাগরে ইলিশ বাড়লে আমাগোরই লাভ। এহন ইলিশের ডিম দেওয়ার সময়। তাই সরকার আমাগো সাগরে যাইতে মানা করছে। আমরা সবাই নির্দেশ মাইন্না ঘরে উইঠা গেছি। সরকারের সব নির্দেশনা আমরা মাইন্না চলি। কিন্তু সরকার আমাগো নিয়া টালবাহানা শুরু করছে।

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় গত ৬ অক্টোবর থেকে দেশের সাগর নদীগুলোতে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। টানা ২২ দিনের এই নিষেধাজ্ঞার সময় খাদ্য সহায়তার আওতায় কর্মহীন জেলেদের ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করার কথা ছিল। তবে নিষেধাজ্ঞার এক সপ্তাহ হলেও কোনো ধরনের চাল সহায়তা পায়নি বরগুনার জেলেরা। এতে পরিবার নিয়ে অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, জেলায় যে পরিমাণ জেলেদের জন্য সরকারের সহায়তায় চাল বরাদ্দ আসে তার থেকে কয়েক গুণ বেশি জেলে রয়েছে। তবে যেসব জেলেদের চাল দেওয়া হয় তারাও সময় মতো পাচ্ছে না। দেখা যায় চাল পেতে পেতে নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর এ কারণে অবরোধ চলাকালীন সময় কর্মহীন জেলেদের ঋণ নিয়ে সংসার চালাতে হয়।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিগত বছর জেলেদের অবরোধ চলাকালীন সময়ে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হতো। জেলে পরিবারের কথা চিন্তা করে এ বছর সরকার আরও ৫ কেজি বাড়িয়ে ২৫ কেজি করেছে। আশা করি অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই চাল পেয়ে যাবে জেলেরা।

প্রসঙ্গত, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম হওয়ার কারণে সরকার ৭ অক্টোবর থেকে  ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন বঙ্গোপসাগরসহ ইলিশ পাওয়া যায় দেশের এমন সকল নদ-নদীতে সকল প্রকার মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। তাই এই ২২ দিন কর্মহীন থাকা বরগুনায় ৩৭ হাজার ৭০ জন জেলেকে ২৫ কেজি করে সরকারি খাদ্য সহায়তার চাল প্রদান করার কথা রয়েছে।

এমএএস