জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর পেরিয়ে গেছে ১২ বছর। এই পৌরসভার নিজস্ব জায়গা আছে, ভবন নির্মাণের বরাদ্দও আছে সাড়ে তিন কোটি টাকা। তবু এত বছর পরও হয়নি নিজস্ব কোনো ভবন। পৌরসভার কার্যক্রম চলছে ভাড়া করা ভবনে।

ক্ষেতলাল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের প্রথম ও দ্বিতীয় তলার ভবন ভাড়া নিয়ে এই পৌরসভার দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের নিচতলায় পৌর মেয়রের কক্ষ, কাউন্সিলরদের কক্ষ, প্রকৌশলী শাখা, হিসাব শাখা, কর শাখা আর দ্বিতীয় তলায় লাইসেন্স শাখা, প্যানেল মেয়রের কক্ষ, সাধারণ শাখা, স্বাস্থ্য শাখা। মেয়রের কক্ষসহ প্রতিটি কক্ষই খুব ছোট। এ কারণে সেবা নিতে আসা লোকজন একসঙ্গে কক্ষগুলোর ভেতর যেতে পারছেন না।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সাবেক মেয়র সিরাজুল ইসলাম বুলু পৌরভবনের জন্য জায়গা ক্রয় করেছেন। একই দাগে তিনি নিজের নামেও জায়গা ক্রয় করেছেন। জায়গাটিতে চলাচলে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুপযোগী হওয়ায় পৌরভবন নির্মাণ হয়নি। বর্তমান পরিষদ নতুন জায়গা ক্রয় করে সেখানে পৌরভবন নির্মাণের কথা ভাবছে। 

জানা গেছে, ক্ষেতলাল উপজেলা সদরকে নিয়ে ২০১০ সালে সরকার পৌরসভা ঘোষণা করেন। ২০১১ সালের ১১ ফেরুয়ারি তৎকালীন ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন মিঞাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি বদলির পর শাহানা আক্তার জাহান প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালের ৮ জুলাই বিএনপি সমর্থিত নির্বাচিত মেয়র আব্দুল মান্নান মোল্লা দায়িত্ব নেন। ২০১৭ সালে তান মেয়াদ শেষ হয়। ২০১৭ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম বুলু মেয়র নির্বাচিত হন।

এরপর তিনি ২০১৮ সালে অক্টোবর মাসে ক্ষেতলাল পৌরসভার নামে ক্ষেতলাল সদর মৌজার ফকিরপাড়া মহল্লায় ৫৫ শতক জায়গা ক্রয় করেন। ২০১৯ সালে সেখানে ভবন নির্মাণের জন্য সাড়ে তিন কোটি টাকায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। পরে সেটি বাতিল করে আবারও দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেটিও বাতিল হয়েছে। এদিকে ২০২২ সালের নির্বাচনে আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন। এই মেয়রের পরিষদ ওই জায়গাতে চলাচলের রাস্তা না থাকাসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে পৌরসভার ভবন নির্মাণে আপত্তি জানিয়েছে।

পৌরসভার সাত নম্বর ওর্য়াডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, পৌর ভবন নির্মাণের জন্য যে জায়গা কেনা হয়েছে, সেখানে জনসাধারণের চলাচলের সমস্যা রয়েছে। রাস্তার অবস্থা বেহাল। তাই ভাড়া ভবনেই দাপ্তরিক কাজ করা হচ্ছে। এই স্বল্প পরিসরের জায়গায় কাজ করতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী আফতাব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাবেক মেয়র সিরাজুল ইসলাম বুলুর সময় পৌরভবনের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। সেই দরপত্রে একজন ঠিকাদার অংশ নিয়েছিলেন। পরে মন্ত্রণালয় দরপত্র বাতিল করে। পরে আবারও দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। মন্ত্রণালয় সেটিও বাতিল করেছে। তৃতীয় দফায় আবারও দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার চূড়ান্ত করা হয়েছে। যেকোনো সময় কার্যাদেশ দিয়ে ভবনের কাজ শুরু করা যাবে। তবে জায়গাতে চলাচল নিয়ে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

ক্ষেতলাল পৌরসভার মেয়র সিরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাবেক মেয়র পৌরসভার জন্য যে জায়গা ক্রয় করেছেন তা অনুপযোগী। রাস্তা আছে কিন্তু চলাচলের অনুপযোগী। ওই জমিতে আসা-যাওয়ার রাস্তা নেই। একদম জমির সামনেই ডোবা আবার পাশেও ডোবা আছে। তাই সেখানে ভবন নিমার্ণ সম্ভব নয়। এজন্য ভালো জায়গা দেখা হচ্ছে। নতুন জায়গা কেনার পর সেখানে পৌরসভার ভবন নিমার্ণ করা হবে।

চম্পক কুমার/এসপি