মাঝির ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ট্রলার পুড়িয়ে দেওয়া হয়নি, ট্রলারটি দুর্ঘটনাবশত পুড়েছে বলে দাবি করেছেন বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত ফাতিমা। তিনি বলেন, মাঝি আনোয়ারের ট্রলার আমি জব্দ করিনি। জব্দ করেছি কারেন্ট জাল এবং সেগুলো পোড়ানোর নির্দেশ দেই। কিন্তু আগুন কোনো না কোনোভাবে ট্রলারে লেগে যায়। 

শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। 

নুসরাত ফাতিমা বলেন, আগুন লেগে যাওয়ার পরে তা নেভানোর জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছি। আগুন নিভেছেও। যখন আগুন প্রায় নিভে গেছে তখন ফায়ার সার্ভিস যায় এবং জব্দ কারেন্ট জালের আগুনে পানি মারছিল। তখন আমি বলেছি, ওগুলোতো আমার জব্দ আলামত। ওগুলোর আগুন না নেভানোর জন্য বলি। 

তিনি বলেন, এটা নিয়ে কেউ কেউ সরকারকে বিব্রত করতে, ২২ দিনের ইলিশ রক্ষা অভিযানকে বানচাল করতে অপপ্রচার চালাচ্ছে। 

ইউএনও বলেন, যেহেতু ট্রলারটি আমার ছিল-মানে রাষ্ট্রপক্ষের। কারণ আমি ওই ট্রলারটি ভাড়া করেছি। ফলে সেটি পুড়িয়ে আমার কোনো লাভ নেই। ফলে ওটা (ট্রলার) পোড়ানোর কোনো কারণই নেই। আমি নির্দেশ দিয়েছি কারেন্ট জাল পোড়ানোর। 

তিনি আশ্বস্ত করেন, যেহেতু ট্রলারটি পুড়ে গেছে, তাই তার (ট্রলারের মাঝি আনোয়ার) পাশে উপজেলা প্রশাসন পাশে থাকবে—সহায়তা করবে। এছাড়া তিনি জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় প্রশাসনকে অবহিত করবেন বলে জানান।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় অভিযানে থাকা ট্রলারের মাঝির ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ডিজেল ঢেলে ট্রলারে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ ওঠে ইউএনওর বিরুদ্ধে।

ট্রলারের মাঝি আনোয়ার হোসেন বলেন, কী কারণে আমার ট্রলার পোড়ালো বুঝতে পারছি না। আমার ট্রলার তল্লাশি করে কিছু পায়নি। তিনি লাঠি নিয়ে আমাকে মারতে উদ্যত হন এবং বলেন তার কল ধরিনি কেন। আমি বলেছি মেশিনের শব্দে রিংটোন শুনিনি। এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। আমি ভয়ে পালিয়ে আসি। এরপরই দেখি আমার ট্রলারে আগুন দেওয়া হয়েছে।

বাবুগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান জানান, মাঝি আনোয়ার হোসেনের ট্রলারে অভিযানে যান তিনি। অভিযান শেষে ঘাটে আসার পর জব্দকৃত জাল পোড়ানো হয়। শেষে ট্রলারের মাঝি জব্দকৃত মাছ সরিয়ে রেখেছেন বলে অভিযোগ করেন। ট্রলার তল্লাশি চালিয়ে কোনো মাছ পান না। এ সময়ে ইউএনও তাকে কিছু কথা বলেন। এতে ভয় পেয়ে মাঝি পেছন থেকে পালিয়ে যায়। মাঝি পালিয়ে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযানের অংশ নেওয়া আনসার সদস্যদের নির্দেশ দেন ডিজেল দিয়ে ট্রলারে আগুন ধরিয়ে দিতে। 

উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক বলেন, অভিযান শেষে ট্রলারের মাঝি জব্দ মাছের কিছু বড় ইলিশ সরিয়ে রাখেন- এটিই তার (ইউএনও) রাগের কারণ। তার নির্দেশনা ছিল অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও ট্রলার ভিড়বে না। মাঝি সেটা করেছে। এ কারণে ইউএনও আইনগতভাবেই আগুন ধরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কারণ অভিযানে তার কথার বাইরে কাজ হলে তার ম্যাজিস্ট্রেসি প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর