বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দুর্নীতি-সন্ত্রাস, চুরি-ডাকাতি আওয়ামী লীগের মজ্জাগত ও প্রকৃতিগত। দুটি জিনিস আওয়ামী লীগের নেতাদের বডি ক্যামিস্ট্রিতে আছে- একটা হচ্ছে চুরি, আরেকটা সন্ত্রাস। 

তিনি বলেন, কথায় কথায় লাঠি নিয়ে আসবে, হুঙ্কার দেবে। কিন্তু তাদের এ হুঙ্কার বাংলাদেশের মানুষ ভয় পায় না। মানুষ এখন জেগে উঠেছে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত উত্তাল তরঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে। এ আন্দোলনের তরঙ্গে আওয়ামী লীগ ভেসে যাবে।

শনিবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে ময়মনসিংহ নগরের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রাবাস মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।


আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার ভোট ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে কেউ ভোট দিতে পারেনি। গাইবান্ধার উপ-নির্বাচন প্রমাণ করে দলীয় সরকারের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। একটি আসনে সুষ্ঠু নির্বাচনে ব্যর্থ নির্বাচন কমিশনের পক্ষে দলীয় সরকারের অধীনে ৩০০ আসনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কীভাবে সম্ভব। একটি আসনে উপ-নির্বাচন করতে গিয়ে ৫১টি ভোট কেন্দ্রের ভোট বন্ধের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। তাই এই সরকারকে অনতি বিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।

ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার অত্যন্ত সু-পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন আইন তৈরি করে সাংবাদিকদের লেখার ক্ষমতা বন্ধ করে দিয়েছে। গণমাধ্যম এবং ফেসবুককে যেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সরকার, সেজন্য তারা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনটা করেছে। কারণ যেকোনো সময় ইচ্ছা করলেই এই অজুহাতে জেলে ভরতে পারবে। এর মাধ্যমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে। এই আইনের আওতায় রাজবাড়ীতে মহিলা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন সমাজকর্মীকে গ্রেপ্তার করে জেলে নিয়েছে। তিনি ফেসবুকের একটা জবাব দিতে গিয়ে শেষ হাসিনাকে নাকি সমালোচনা করেছেন। সেজন্য গভীর রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়েছে। শেখ হাসিনার সমালোচনা এই গণতান্ত্রিক দেশে করা যাবে না। কারণ এটি গণতান্ত্রিক দেশ নয়। এভাবেই তারা সারা দেশে ত্রাস সৃষ্টি করেছে।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসন এবং বিচার বিভাগকেও দলীয়করণ করা হয়েছে। আর পার্লামেন্টে তো কোনো আলাপ আলোচনাই হয় না। তারা শুধু প্লট আর গাড়ি নেয় আর সুন্দর সুন্দর জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। জনগণের কোনো কথা সেখানে আলোচনা হয় না। কারণ তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। এই আ.লীগ সরকার গত ১৫ বছরে এই দেশের সমস্ত অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ডাকা আন্দোলনে ভোলায় নূরে আলম ও আব্দুর রহিম, নারায়ণগঞ্জে শাওন, মুন্সীগঞ্জে শহিদুল ইসলাম শাওন ও যশোরে আব্দুল আলিম নিহত হন।

এসব হত্যার প্রতিবাদে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এ গণসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি।

গত ৬ অক্টোবর ময়মনসিংহের সার্কিট হাউস মাঠে বিভাগীয় সমাবেশের অনুমতি চায় দলটি। সেখানে অনুমতি না দিয়ে শনিবারের সমাবেশের জন্য পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রাবাস মাঠ নির্ধারণ করে দেয় প্রশাসন।

ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এ.কে.এম শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিভাগীয় গণসমাবেশে বক্তব্য দেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মশিউর রহমানসহ বিএনপি এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

পথে পথে বাধা সত্ত্বেও অর্ধলক্ষাধিক নেতাকর্মীর উপস্থিতি
সমাবেশকে কেন্দ্র করে বন্ধ ছিল গণপরিবহন, পথে পথে ছিল বাধা। অনেককে আসতে হয়েছে ট্রলারে করে। তারপরও সব প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে দুপুরের আগেই রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। সকাল থেকেই থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে দলটির নেতাকর্মীরা। সমাবেশের মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ার পর আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাও হয়ে ওঠে লোকে লোকারণ্য।

আ.লীগের কর্মসূচিতে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
ময়মনসিংহে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য ও নগরীর ১৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মাসুমসহ চারজন আহত হয়েছেন। 

এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রেলওয়ে পুলিশ টিয়ার শেল ও শব্দ বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী নগরীর কৃষ্ণচূড়া চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেনতারা। এসময় বিএনপির সমাবেশ থেকে ফেরত একদল নেতাকর্মী তাদের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে তার পাল্টা ধাওয়া দিয়ে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে।

এদিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, তারা বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে স্টেশনে এলে কৃষ্ণচূড়া চত্বর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। 

উবায়দুল হক/এমএএস