মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম

টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ নির্বাচনে টাকা দিয়ে ভোট কিনেও সদস্য পদে বিজয়ী হতে পারেননি রফিকুল ইসলাম সংগ্রাম নামে এক প্রার্থী। এ কারণে ভবিষ্যতে আর কোনো নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে টাকা দিয়ে ভোট কেনার বিষয়টি নিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।

ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে রফিকুল ইসলাম লিখেছেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে ১১নং ওয়ার্ডে (বাসাইল) সাধারণ সদস্য পদে চারজন প্রার্থী ছিলাম। ভোটার ছিল ৯৪ জন। দিন শেষে জানা গেল, প্রত্যেক প্রার্থী ৫০ থেকে ৬০ জন ভোটারকে টাকা দিয়েছে। তার মধ্যে আমাকে ৬০ জন ভোটার কথা দিলেও এর মধ্যে কমবেশি ৫৫ জন ভোটার আমার কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করেছেন। ভোট দিল মাত্র সাতজনে। এই হলো ভোটারদের আসল চরিত্র। পৃথিবীর সব কিছুই একবার দেখলে চেনা যায়, শুধু মানুষ বাদে। আমাকে যারা ভোট দেননি মনে হয় আপনাদের নামের তালিকা হওয়ার আগে আমার টাকা ফেরত দেওয়া উচিত। আপনারা না জনপ্রতিনিধি! ভোট আপনি যাকে খুশি তাকে দেন, এটা আপনার অধিকার, তাই বলে টাকা নিবেন চারজনের কাছ থেকে ভোট দিবেন একজনকে এটা কেমন চরিত্র আপনাদের। আপনাদের কাছ থেকে আপনার এলাকার জনগণ কী সেবা পেতে পারে। আল্লাহ তুমি আমাদের সবাইকে হেদায়েত দান করো, মানুষ হওয়ার তৌফিক দান করো।’

এদিকে সদস্য প্রার্থীর এই ফেসবুক স্ট্যাটাস মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। নেটিজেনরা তাকেসহ জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করতে শুরু করেন। ফেসবুক স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হওয়ার পর রফিকুল ইসলাম সেটি ডিলিট করে দেন।

নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ সদস্য পদে বাসাইলে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এতে নির্বাচন শেষে আতিকুর রহমান তালা প্রতীকে পান শূন্য ভোট, মিজানুর রহমান খান হাতি প্রতীকে পান ১১ ভোট, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম উটপাখি প্রতীকে পান ৭ ভোট এবং নাছির খান টিউবওয়েল প্রতীকে পান ৫৫ ভোট।

পরাজিত সদস্য প্রার্থী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেক প্রার্থীই ৫০ জন বা ৬০ জন ভোটারকে টাকা দিয়ে কিনেছে। একজন ভোটারকে সর্বনিম্ন ২০ হাজার করে দিতে হয়েছে। আবার অনেক ভোটারকেই ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। আমাকেও টাকা দিয়ে ভোট কিনতে হয়েছে। হয়ত সম্পর্কের কারণে আমার কম টাকা লেগেছে। তবে সর্বনিম্ন ২০ হাজারের নিচে কেউ টাকা নেয়নি। একজন ভোটার আমার সামনে খাম খুলে টাকা গুনে নিয়েছে। টাকা কম থাকায় তিনি আরও ৫ হাজার টাকা চেয়ে নিয়েছেন। একজন ভোটার চারবার বিক্রি হয়েছে। এমন হলে নির্বাচন কীভাবে করবো। তবে ভবিষ্যতে আর কোনো নির্বাচনে দাঁড়াবো না।

এ বিষয়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. উমর ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোট কেনা জঘন্য অপরাধ। এটা অন্যের অধিকার টাকা দিয়ে কিনে নেওয়া। একজন মানুষের মানবিক সত্তাকে হরণ করার শামিল। এক সময় যারা ভোট কিনতো বা বিক্রি করতো তারা এটা নিয়ে লজ্জাবোধ করতো। এখন ওই মূল্যবোধগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ভোট কেনা-বেচায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। যারা রাজনৈতিক ব্যক্তি বা ভোটদাতা রয়েছেন তাদেরকে মানবিক, সামাজিক ও নৈতিকভাবে সচেতন এবং সতর্ক হতে হবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে শক্তভাবে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। 

অভিজিৎ ঘোষ/আরএআর