দেশের নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরে ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলায় বেকার হয়ে পড়েছেন ভোলার তিন লাখেরও বেশি জেলে। নিষেধাজ্ঞার ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রণোদনার চাল পাননি জেলেরা। দু-একটি ইউনিয়নে চাল বিতরণ শুরু হলেও অধিকাংশ ইউনিয়নে এখনো চাল পৌঁছায়নি। বিকল্প কর্মসংস্থানের অভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে জেলেদের।

অন্যদিকে নিবন্ধনের আওতায় আসতে না পারায় লক্ষাধিক জেলে চাল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মৎস্য বিভাগ বলছে, নিবন্ধিত জেলেদের কাছে শিগগিরই চাল পৌঁছে দেওয়া হবে।

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ যাতে অবাধে ডিম ছাড়তে পারে সেজন্য ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনের জন্য ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। আইন অমান্য করে যারা মাছ ধরছেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বেকার জেলেদের সংসার নির্বাহের জন্য মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে প্রণোদনা হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জেলে প্রতি ২৫ কেজি চাল। কিন্তু সেই চাল না পেয়ে পেটের দায়ে নদীতে নামতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক জেলে। 

জেলেরা বলছেন, ২২ দিন আয়-রোজগার না থাকার পাশাপাশি সময়মতো সরকারের প্রণোদনা না পাওয়ায় দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে তাদের জীবন।

জেলেদের অভিযোগ, শুধু এবারই নয়, প্রতিবারই স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং মৎস্য বিভাগের উদাসীনতার কারণে তারা সঠিক সময়ে চাল পান না। মাছ ধরা ছাড়া অন্য কোনো কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রতি বছরই তাদেরকে এমন দুর্বিষহ কষ্টে পড়তে হয়। সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হলে এমন পরিণতি হতো না। 

জেলে মো. নূরে আলম বলেন, অনেকদিন ধরে অভিযান চলছে। সরকার আমাদেরকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করেনি। কোনো চাল বা কিছুই দেয়নি। তাই আমরা খুব অভাবে আছি। সরকার চালটা দিলেও তো আমরা বাড়ি গিয়ে অন্তত ভাত খাইতে পারতাম।

জেলে মো. মনির বলেন, সরকার ২২ দিনের যে অভিযান দিছে, এই অভিযানের আগেই চাল দিলে আমাদের জেলেদের অনেক ভালো হইতো। চাল তো দিল না। তাই বউ-বাচ্চা নিয়ে এখন না খেয়ে মরা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এছাড়া ঋণের কিস্তি তো আছেই। সরকার যদি আমাদের দিকে একটু দৃষ্টি দিতো তাইলে ভালো হইতো।


 
ভোলা সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জামাল হোসাইন জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ে চাল বিতরণ শুরু হয়েছে। শিগগিরই সব ইউনিয়নের নির্ধারিত জেলেরা চাল পেয়ে যাবেন। নিবন্ধন না থাকায় সব জেলেকে চাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পরবর্তীতে প্রকৃত জেলেদেরকে নিবন্ধনের আওতায় এনে চাল দেওয়া হবে।

ভোলায় তিন লাখেরও বেশি জেলে মৎস্য আহরণের সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩৭২ জনকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে। এবার ১ লাখ ৩২ হাজার জেলের জন্য প্রণোদনার চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

আরএআর