ভূষেণ চন্দ্র (৪০) ও পরানন্দ চন্দ্র (২৯)। সম্পর্কে দুজনে মামাতো-ফুপাতো ভাই। তারা পেশায় কাঠমিস্ত্রি। বাড়ির সামনে রাস্তা সংলগ্ন তাদের ছোট একটি দোকান। সেই দোকানেই এক যুগেরও বেশি সময় ধরে একসঙ্গে কাজ করছেন তারা। 

গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রীতি ফুটবল খেলার জন্য সদলবলে ঠাকুরগাঁওয়ে আসেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সুমন ফুটবল একাডেমির কর্ণধার ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। জেলায় তিনটি প্রীতি ম্যাচে অংশগ্রহণ করে ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমি। ৯ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সুগার মিলস কলোনি মাঠে, ১০ সেপ্টেম্বর হরিপুর উপজেলার কারবালা মাঠে ও ১১ সেপ্টেম্বর রাণীশংকৈল উপজেলার ডি কে কলেজ মাঠে প্রীতি ফুটবল ম্যাচে অংশগ্রহণ করেন ব্যারিস্টার সুমন ও তার দল৷ 

হরিপুর উপজেলার কারবালা মাঠে অনুষ্ঠিত সেই প্রীতি ফুটবল খেলাটি দেখতে গিয়েছিলেন ভূষেণ চন্দ্র ও পরানন্দ চন্দ্র। এর আগে টিভি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যারিস্টার সুমনের কাজকর্ম দেখে তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন দুই ভাই। তাদের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া ইউনিয়নের মহেন্দ্রগাঁও শিশুডাঙ্গী গ্রামে। প্রায় চল্লিশ দিন ধরে ফুটবল চেয়ার বানিয়েছেন তারা। তারা চেয়ারটি ব্যারিস্টার সুমনকে উপহার দিতে চান। 

কাঠমিস্ত্রি পরানন্দ বলেন, আমরা দুই ভাই অনেক আগে থেকে ব্যারিস্টার সুমন স্যারের ভিডিও দেখি। আমাদের অনেক ভালো লাগে তার কাজগুলো। তিনি যেদিন কারবালা মাঠে খেলতে আসেন, আমরা দোকান বন্ধ করে খেলা দেখতে গেছিলাম। খুব ইচ্ছা ছিল তাকে আমরা সরাসরি দেখব। সেদিন আমরা গিয়ে সরাসরি খেলা দেখতে পেরেছি। ফুটবলের প্রতি ভালোবাসার কারণে তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছেন। আমি আমার ভাইকে বললাম আমরা কিছু উপহার দিতে পারি কিনা। তারপরে দুজন মিলে অনেক পরিশ্রম করে এই চেয়ারটি বানিয়েছি। তিনি এ চেয়ারটি যে কোনোভাবে গ্রহণ করলে আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক হবে। 

ভূষেণ চন্দ্র বলেন, আমরা দুই ভাই মিলে কারবালা মাঠে খেলা দেখতে গেছিলাম। আসার পর আমার ছোট ভাই বলল আমরা স্যারকে কিছু উপহার দিব। তখন আমি তাকে বললাম আমরা কাঠমিস্ত্রি, আমরা আর কী উপহার দিব। পরে তাকে বললাম আমরা তাহলে স্যারকে ফুটবল চেয়ার দিব। তারপর চল্লিশ দিন ধরে আমরা এটা বানিয়েছি। বানানোর সময় আমরা দুই ভাই ছাড়া আর কেউ জানতো না। পরে সকলে জানছে। এখন আমরা চাই আমাদের এ কষ্টের চেয়ারটি যেন তিনি গ্রহণ করেন। তিনি আমাদের চেয়ারটি উপহার হিসেবে গ্রহণ করলে আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক হবে। আশা করি তিনি আমাদের এ উপহারটি গ্রহণ করবেন। 

ভূষেণ চন্দ্রের স্ত্রী শুকোবালা বলেন, আমি মনে করেছিলাম তারা এটা অর্ডার পাইছে। বানানোর পর শুনলাম তারা এটা সুমন স্যারকে দেবে। অনেক পরিশ্রম আর কষ্ট হয়েছে তাদের। আমরা সকলে চাই এ ফুটবল চেয়ারটি যাতে তিনি গ্রহণ করেন। 

প্রতিবেশী জাহাঙ্গীর বলেন, এটি আসলে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। একজন মানুষ অপর একজন মানুষকে কতটা ভালোবাসলে এমন উপহার তৈরি করতে পারে, তা এখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমি চাই তিনি তাদের এ ফুটবল চেয়ারটি উপহার হিসেবে গ্রহণ করুক।  

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, আমিও প্রথমে শুনে অবাক হয়েছি। তারা দুজনে কাঠমিস্ত্রি। সেটিই তাদের আয়ের উৎস। তা দিয়েই তাদের পরিবারের ভরণপোষণ চলে। তারপরও সব কাজ বাদ দিয়ে একটি ফুটবল চেয়ার বানিয়েছেন তারা। এটি আসলে ভালোবাসার একটি নমুনা। যেহেতু তারা কষ্ট করে বানিয়েছেন আমি চাই ব্যারিস্টার সুমন এটি গ্রহণ করুক। 

এম এ সামাদ/আরএআর