২৪ বছর ধরে নৌকা বেয়ে সংসার চালান তাসলিমা

স্বামী অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়েছিল দীর্ঘদিন। অভাবের তাড়নায় নৌকার বৈঠা হাতে নিই। ১৯৯৭ সালে স্বামী মারা যায়। তার মৃত্যুতে ভেঙে পড়ি। কিছুদিন পর শুরু হয় জীবন সংগ্রাম। ২৪ ধরে চলছে বেঁচে থাকার সংগ্রাম।

এভাবেই নিজের জীবন সংগ্রামের কথা জানালেন তাসলিমা আক্তার (৬৮)। তিনি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মৃত নাসির সরদারের স্ত্রী। তাসলিমা জয়ন্তী নদীতে নৌকা বেয়ে সংসার চালান। মাউছাখালী হাজিপাড়া খেয়াঘাটের মাঝি তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৪ বছর আগে তাসলিমার স্বামী মারা যান। তিন মেয়ে এক ছেলে তার। দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এখন এক মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে থাকেন। ছেলে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি থাকেন।

স্থানীয়রা জানায়, স্বামীর মৃত্যুর আগে থেকে জয়ন্তী নদীতে নৌকা বেয়ে সংসার চালান তাসলিমা। জীবনের শেষ সময়ে এসেও বৈঠা ছাড়তে পারেননি। সরকারি সুবিধা বলতে বয়স্কভাতার একটি কার্ড পেয়েছেন। কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন তাসলিমা। 

মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সংসারে অভাব এজন্য শ্বশুরবাড়ি থেকে মেয়েরা আসে না। একমাত্র ছেলে বউ নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থাকে। দেখতে আসে না; খোঁজখবরও নেয় না। আমার জায়গা-জমি কিছুই নেই। থাকার একটা ঘর আছে। ছোট মেয়েকে নিয়ে থাকি।

তাসলিমা আক্তার

তাসলিমার প্রতিবেশী খোকন, মালেক, হালিম, হামিউয়া ও শুরায়াসহ কয়েকজন জানিয়েছেন, গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীত মাথায় নিয়ে নৌকায় যাত্রীদের পারাপার করেন তাসলিমা। নদী পার করতে পাঁচ টাকা করে নেন। এই আয় দিয়ে সংসার চলে তার। ছেলে থেকেও নেই। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থাকে। মা বেঁচে আছেন না মরে গেছেন খোঁজখবর নেয় না ছেলে। উপার্জন করার মতো কেউ না থাকায় বৃদ্ধ বয়সেও নৌকা বেয়ে সংসার চালান তাসলিমা।

তাসলিমা বলেন, আমাকে দেখার কেউ নেই। ছেলে থেকেও নেই। শেষ বয়সেও নৌকা চালাতে হয়। মানুষ পারাপার করলে সংসার চলে। এটাই আমার জীবন, এখানেই হয়তো শেষ হবে। 

স্বামীর মৃত্যুর আগে থেকে জয়ন্তী নদীতে নৌকা বেয়ে সংসার চালান তাসলিমা

নৌকার যাত্রী আবুল কালাম বলেন, দুই যুগ ধরে দেখছি; জয়ন্তী নদীতে নৌকা বেয়ে সংসার চালান তাসলিমা। আগে স্বামী নাসির সরদার নৌকা চালাতেন; এখন তাসলিমা চালান।

তাসলিমা আক্তার বলেন, ২৪ বছর ধরে এই নদীতে নৌকা বাই। নদী অনেক বড় ছিল। প্রচুর স্রোত ছিল। তখনো নৌকা বাইতাম, এখনো বাই। জীবনের ৬৮ বছর পার করেছি। আর কয়দিন বাঁচুম। যতদিন বাঁচুম ততদিন নৌকা বেয়ে সংসার চালামু। স্বামী এই নৌকাটা চালাইছে, এহন আমি চালাই। বাঁচার জন্য নৌকা চালাই। আর কোনো উপায় নেই। মনে হয়; নৌকা বাইতে বাইতে জীবন শেষ হবে আমার।

কোদালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম মিজানুর রহমান বলেন, আমার বাড়ির পাশেই তাসলিমা আক্তার নৌকা চালান। তার তিন মেয়ে এক ছেলে। ছেলেটি তার খোঁজ নেয় না। তাসলিমাকে বয়স্কভাতার কার্ড দেওয়া হয়েছে। তাকে একটি সরকারি ঘর দেওয়া যায় কিনা, বিবেচনা করে দেখব।

গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলমগীর হুসাইন বলেন, ওই নারী মাঝির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তার সম্পর্কে খোঁজ নেব।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এএম