কয়েক মাস যাবৎ পরিচর্যা করে বাজারজাত করার ঠিক আগ মুহূর্তে ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন মেহেরপুরের বাঁধাকপি চাষিরা। গেল বছর গ্রীষ্মকালীন বাঁধাকপি চাষে চাষিরা লাভবান হলেও চলতি মৌসুমে বাজারজাত করার সময় পাতা পচা ও পাতা পোড়া রোগ দেখা দেয়। কপি বিক্রি করতে না পারায় চাষিদের মোটা অংকের টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। 

চাষিদের অভিযোগ, কৃষি অফিসের পরামর্শ থেকে তারা বঞ্চিত। আর কৃষি অফিস বলছে, আবহাওয়াজনিত কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বাজারজাত করার সময় রোগাআক্রান্ত হলে ওষুধ প্রয়োগে কোনো ফল আসবে না বলেও জানান কৃষি বিভাগ। তবে যাদের বাঁধাকপি বাজারজাত করতে দেরি হবে তাদের জন্য ছত্রাক নাশক স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

মেহেরপুর জেলার অর্থকরী ফসলের মধ্যে অন্যতম বাঁধাকপি। সারা বছরে এ বাঁধাকপি আবাদ হয়। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন বাঁধাকপি আবাদ চাষিদের জন্য অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় চাষিরা বাঁধাকপি চাষে বেশ আগ্রহী।

জেলার আবহাওয়া অনুযায়ী রাজা সান, ট্রপিক স্টার, সুপার সান ও ,ট্রপিক কুইন জাতের বাঁধাকপি চাষ হয়ে থাকে। গেল বছর চাষিরা লাভবান হওয়ায় অনেকেই এ বছর কপি চাষ করেছেন। আবার যাদের বাঁধাকপি পাতা পচা বা পাতা পোড়া রোগের কবলে পড়ে লোকসান করেছেন তারা এ বছর আগাম জাতের বাঁধাকপির আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

মেহেরপুর জেলায় এ বছর সাড়ে ৮০০ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে গাংনী উপজেলায় ৫০০ হেক্টর বাঁধাকপির চাষ করা হয়েছে। প্রথম দিকে বাঁধাকপি ক্ষেত বেশ ভালো দেখা গেলেও বাজারজাত করার সময় দেখা দিয়েছে বিপত্তি। হঠাৎ নানা ধরনের ছত্রাক ও পাতা পচা রোগ দেখা দেয়। এ রোগে বাঁধাকপি গায়ে বিভিন্ন দাগ পড়েছে। পাতা পচে কুকড়িয়ে যাচ্ছে। পাতা পচার কয়েকদিনের মধ্যে সমস্ত কপি পচন ধরা ছাড়াও পচনের কারণে বাজারে বিক্রি হচ্ছে না বাঁধাকপি। 

বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে জমিতে গিয়ে মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছেন। অনেক চাষি তাদের আবাদকৃত বাঁধাকপি গো খাদ্য হিসেবে নিয়ে যাচ্ছেন। কোনো ছত্রাক নাশক প্রয়োগ করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না চাষিরা। বিভিন্ন মাঠের অন্তত ২০০ হেক্টর জমির বাঁধাকপি পাতা পচা রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

কপি ক্ষেতে রোগ বালাই দেখা দেওয়ায় পরামর্শ নিতে চাষিরা বিভিন্ন জনের কাছে ছুটলেও সংশ্লিষ্ট এলাকার উপ-সহকারী কৃষি অফিসারদের দেখা পান না বলেও অভিযোগ চাষিদের। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ীদের পরামর্শ নিচ্ছেন তারা। তবে কোনো ফলাফল পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন নওপাড়া গ্রামের চাষি রহিদুল ইসলাম। 

নওপাড়া গ্রামের বাঁধাকপি চাষি আলী হোসেন জানান, তিনি চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত জমি তৈরি থেকে শুরু করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কপি বিক্রি করে এক লাখ টাকা পাবেন বলে আশা করেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ সময়ে পাতা পচা রোগ দেখা দেয়ায় কপি বিক্রি করতে পারছেন না। পচন ধরা বাঁধাকপি এখন গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।এতে লোকসান গুণতে হবে বলে জানান তিনি। 

গাংনীর কৃষক বকুল হাসেন জানান, গেল বছর পাঁচ বিঘা জমিতে আগাম এটাম জাতের বাঁধাকপির আবাদ করেছিলেন তিনি। হার্ভেস্টিং সময়ে পচন ধরা রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক টাকা লোকসান হওয়ায় এ বছর আবাদ করেননি।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ লাভলী খাতুন জানান, আবহাওয়া অনুকূলে না হওয়ায় গ্রীষ্মকালীন বাঁধাকপি চাষ ব্যহত হচ্ছে। দিনে প্রচণ্ড গরম ও রাতে ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে মেহেরপুরের গাংনীতে বাঁধাকপি ক্ষেতে পচন দেখা দিয়েছে। কয়েকজন চাষি এমন রোগের বিষয়ে আমাকে জানয়েছেন। চাষিদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

আকতারুজ্জামান/এমএএস