তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের চিহ্ন থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে খুলনা মহানগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে আয়োজিত বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনার সরকার অবৈধ ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে দেশকে নরকে পরিণত করেছে। এই অবৈধ সরকার আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। আমাদের রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। আমাদের সকল অর্জনকে ধ্বংস করেছে। শুধুমাত্র একটি কারণে, তাদের অবৈধ ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে। তারা জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, তারা বিনাভোটে, জনগণকে বঞ্চিত করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।

তিনি বলেন, এই সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, আমাদের সমস্ত বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করেছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। সাধারণ মানুষ কোনো স্বাস্থ্যসেবা পায় না। 

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার আমাদের অনেক ক্ষতি করেছে। আমাদের ৬০০ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। হাজারো নেতা-কর্মীকে খুন করেছে। অসংখ্যা নেতা-কর্মীকে আহত করেছে। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। সাতক্ষীরার হাবিবকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। ৪৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এরা মানুষ! এরা গণতন্ত্র চায়! তারা শুধু মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে। তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মানুষকে ভুল বোঝায়। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। একটাই বাধ্যতামূলক বিকল্প, আন্দোলন, আন্দালন, আন্দোলন। আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী একনায়ক শেখ হাসিনার সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনি অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। কারণ আপনারা বৈধ নন, আপনারা জনগণের ভোটে আসেননি। সংসদ বিলুপ্ত করুন। সংসদ বিলুপ্ত করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিন। কারণ এই দেশে আপনাদের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। সে কারণেই নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা জনগণ মেনে নেবে না। 

নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানতে চান না কেন? এমন প্রশ্ন করে মির্জা ফখরুল বলেন, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আপনাদের চিহ্ন থাকবে না, ১০টি আসনও পাবেন না। অথচ এরাই এক সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিল। ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। দেশের স্বার্থে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাদের দাবি মেনে নিয়ে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। ক্ষমতায় আসার পর তারা বিচারপতি খায়রুল হককে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চালু করেছে। 

তিনি বলেন, সরকার উন্নয়নের কথা বলছে, তারপরও দেখা যায় যে লোডশেডিং ৪/৫ বার হচ্ছে। তারপর আমরা দেখছি ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা গ্রিড ফেল করছে। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যে,  তিনি দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন। দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি কেন শুনতে পান আপনি। আপনি তো ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে। এরা মিথ্যা কথা প্রচার করে, মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে সরকার যে ভালো কাজ করছে সেটা বোঝাতে চায়। আজকে প্রমাণিত হয়েছে যে তারা আসলে কোনো কাজই করেনি। তারা জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। এখন বলছে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শুনতে পারি। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ একবার দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। তখন অমর্ত্য সেন বই লিখতে গিয়ে লিখেছিলেন- ৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল এই আওয়ামী লীগের কারণে, তাদের দুঃশাসনের কারণে। আবার সেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে, আবার সেই আগের মতো তারা বাংলাদেশকে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।

তরুণ-যুবকদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার তরুণ-যুবকদের সামনে কি কোনো ভবিষ্যৎ দিতে পেরেছে? তাদেরকে কি কোনো চাকরি দেওয়ার কথা বলেছে। ব্যবসা দেওয়ার কথা বলেছে। হ্যাঁ বলেছিল, ১০ টাকা কেজি চাল দেবে, এখন কতো করে খাচ্ছেন। আজকে ৭০/৮০/৯০ টাকা। আর কী বলেছিল- ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। দিয়েছে চাকরি? দেয়নি। কাদেরকে দেয়, শুধু আওয়ামী লীগকে দেয় এবং ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে দেয়। লুট করে নিয়ে যায়। আমরা আগামীতে যদি রাষ্ট্রক্ষমতা পাই তরুণ-যুবকদের কাজ দেব, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব।

খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এসএম শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে গণসমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, আব্দুল আওয়াল মিন্টু, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম প্রমুখ। 

মোহাম্মদ মিলন/আরএআর