বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে রূপ নিয়েছে। ঝড়টি মোকাবিলায় সরকারি-বেসকারিভাবে নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বরিশালে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে সাইক্লোন শেল্টার। ব্যবস্থা করা হচ্ছে শুকনো খাবার, নিরাপদ পানি ও ওষুধের। 

রোববার রাতে বিভাগীয় প্রশাসন ও ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) জানিয়েছে, উপকূলীয় লোকজনকে নিরাপদে নেওয়ার জন্য বিভাগের ৩ হাজার ৯৭৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে সুপেয় পানি, শুকনো খাবার ও ওষুধের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, ৩২ হাজার ৫শ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবকরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। দুর্যোগ পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতার জন্যও তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সিপিপির রেডিও ওয়ার্কশপ ইনচার্জ মো. সোহাগ হোসেন বলেন, আমরা প্রস্তুত। জরুরি অবস্থা জারি করা হলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির বরিশাল ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকরা প্রস্তুত রয়েছেন। 

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মো. মাসুম জানান, অমাবস্যা থাকায় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ভারি বৃষ্টিপাত ও বাতাসের পাশাপাশি উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতায় উপকূল প্লাবিত হতে পারে। এতে কাঁচা ঘরবাড়ি, ফসল ও গাছপালার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বরিশাল বিভাগজুড়ে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার ও প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিশেষ করে বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলা প্রশাসককে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া বরিশাল বিভাগে একটি কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে।

এদিকে বরিশাল বিভাগীয় আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক প্রণব কুমার ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের গতিবেগ কখনো বাড়ছে, কখনো কমছে। সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না ঘূর্ণিঝড়টি বরিশাল অভিমুখে আঘাত হানবে কি না।

তিনি আরও জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ব্যাস অনেক বড়। ধীরে ধীরে সেটি এগিয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না যে, দেশের কোন উপকূলে ঝড়টি আঘাত হানবে। ঠিক কোন অঞ্চলের ওপর দিয়ে মূল ঝড়টি অতিক্রম করবে, তা আরও সুনির্দিষ্টভাবে জানানো যাবে সম্ভাব্য আঘাতের পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা আগে।

এই আবহাওয়াবিদ বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুসারে ধারণা করা হচ্ছে, ২৫ অক্টোবর ভোর রাতে উপকূলে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানবে। আজ বরিশালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম ছিল, মাত্র ১ দশমিক ৮ মিলিমিটার। কম বৃষ্টিপাতে ঝড়ের তাণ্ডবের ভয় বেশি থাকে। কারণ বেশি বৃষ্টি হলে ক্রমান্বয়ে ঝড়টি দুর্বল হয়ে পড়ে। আবহাওয়ায় গুমট ভাব বিরাজ করছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা/ঝোড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার পর্যন্ত অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। 

আরএইচ