উপকূলে তেমন ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে না পারলেও সাগরে ভয়ঙ্কর ছিল ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। তবে এবারের ঘূর্ণিঝড় বরগুনাসহ আশপাশের উপকূলীয় সমুদ্রগামী জেলেদের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। মাছ ধরায় চলমান নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটেনি বলে মনে করছেন বরগুনা উপকূলের জেলেরা।

জেলে ও ট্রলার মালিক সংগঠন সূত্রে জানা যায়, মা ইলিশ রক্ষায় গত ৭ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের জন্য সাগর ও নদ-নদীতে সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে। গতকাল সোমবার (২৪ অক্টোবর)  দেশের উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। এদিন ছিল নিষেধাজ্ঞার ১৮তম দিন। তাই কোনো জেলে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে না গিয়ে নিরাপদে তীরে অবস্থান করছিলেন। তাই ঘূর্ণিঝড়ের থাবা থেকে তারা রক্ষা পেয়েছেন। 

বরগুনা সদরের আলম গোলদার, রফিক, নাসিরুদ্দিনসহ কয়েকজন জেলে বলেন, সাগরে নিষেধাজ্ঞা চলায় আমরা কেউ সাগরে যাইনি। এই সাইক্লোন যদি নিষেধাজ্ঞার সময়ের বাইরে হতো, তাহলে আমাদের সঙ্গে কী ঘটতো তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন। সামান্য নিম্নচাপ হলেও আমরা সাগরে টিকতে পারি না। আমরা সবাই গভীর সমুদ্রে মাছ ধরি। 

লিয়াকন, রবিউল, হোসেন মাঝিসহ পাথরঘাটার কয়েকজন জেলে বলেন, সাগরে সামান্য ঝড় হলেই আমাদের নাকানি চুবানি খেতে হয়। আর এটা তো ঘূর্ণিঝড়, সিগন্যাল ছিল ৭ নম্বর। এত বড় সিগন্যালে আমরা হয় ঢুবে মরতাম, নইলে জাল-ট্রলার হারিয়ে সুন্দরবনে ভেসে যেতাম। এই প্রথম কোনো সিগন্যালের মধ্যে আমরা সাগরে ছিলাম না। মহান আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মৎসজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, এবার নিষেধাজ্ঞা ছিল বিধায় জেলেদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। এ অবস্থায় জেলেরা সাগরে থাকলে সিগন্যাল পেয়ে তাদের তীরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যেত। সব গুছিয়ে তীরে রওয়ানা করার সময় হয়তো ঝড় শুরু হয়েও যেতে পারতো। তাছাড়া আমাদের নেই কোনো আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অফিস থাকলে আমরা দ্রুত সঠিক পূর্বাভাস পেতাম।

প্রসঙ্গত, ২৪ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। এটির আঘাত হানার মূল কেন্দ্র বরগুনা থাকলেও পার্শ্ববর্তী ভোলার পাশ দিয়ে অতিক্রম করে ঘূর্ণিঝড়টি৷ এ ঝড়ে এখন পর্যন্ত বরগুনায় একজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও বেড়িবাঁধ ও ফসলি জমির কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

খান নাঈম/আরএআর