টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ মধ্যরাত থেকে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার কথা ছিল জেলেদের। তাই ৪-৫ দিন আগে থেকেই প্রস্ততি নিয়ে রেখেছিল বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মাছ ধরার ট্রলারগুলো। কিন্তু হঠাৎ সমুদ্রে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে জেলেদের। কারণ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে লাগাতার লোডশেডিংয়ে  বরফ সংকট চরমে।

জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ২২-২৩ অক্টোবর বিদ্যুৎ চলে যায় পাথরঘাটায়। ঝোড়ো আবহাওয়া কেটে গেলে বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে বিদ্যুৎ আসে। তখন থেকেই চালু হয় উপজেলার বরফকলগুলো। কিন্তু কারখানায় বরফ তৈরি হতে ১-৩ দিন সময় লাগে। অথচ নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আজ রাতে। বরফ না থাকায় সাগরে যেতে পারছেন না জেলেরা।

জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং উপকূল অতিক্রম করে ২৪ অক্টোবর রাতে। এর প্রভাবে ২-৩ দিন আগে থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল পাথরঘাটায়। ফলে বন্ধ ছিল পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের সব বরফ কল। ফলে বরফ তৈরি হয়নি। এদিকে পর্যাপ্ত বরফ মজুত না করে সাগরেও যেতে পারছেন না জেলেরা।

মতিন, সুদেব, লোটন মাঝি, আফজালসহ পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের কয়েকজন জেলে বলেন, নিষেধাজ্ঞা একের পর এক থাকেই। এই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ আজ রাতে, তবুও আমাদের মধ্যে আমেজ নেই। কারণ কোথাও বরফ নেই। বরফ না নিয়ে সাগরেও যেতে পারছি না। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এক সপ্তাহ বিদ্যুৎ ছিল না। তাই মিলে বরফ হয়নি। বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ আসছে। বরফ তৈরি হতে ১-৩ দিন পর্যন্ত সময় লাগবে। এ অবস্থায় আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়লাম।

পাথরঘাটা বরফ ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপক আউয়ালুর রাশেদ সবুজ বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে বৈরী আবহাওয়া ছিল পাথরঘাটায়। তাই বিদ্যুৎ ছিল না। গতকাল বিদ্যুৎ আসার সঙ্গে সঙ্গেই মিলে কাজ শুরু হয়ে গেছে। এখনো বিদ্যুৎ আপ-ডাউন করছে। আমাদের বরফ না থাকায় জেলেদের দিতে পারছি না। বরফ বের হতে ২-৩ দিন লাগবে।

জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, আজ জেলেদের সাগরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বিদ্যুৎ ছিল না গোটা উপজেলায়। তাই বরফের হাহাকার লেগে গেছে। বরফ হতে আরও ২-৪ দিন সময় লাগবে। তারপর বরফ নিয়ে সাগরে রওনা করবে জেলেরা। 

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, দেশে ইলিশের পরিমাণ বাড়াতে অসাধু জেলেদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞার সফলতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতেও কাজ করছি। মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জেলায় ৩৭ হাজার ৭০ জন জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। সাগরে যাতে জেলেরা নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করতে পারে এজন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশের জলসীমায় ভিনদেশি জেলেদের প্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে থাকবে প্রশাসন।

খান নাঈম/এসপি