রংপুরে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাঁটানো বিলবোর্ডের ওপর বিএনপির গণসমাবেশের বিলবোর্ড সাঁটানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিএনপির সাঁটানো বিলবোর্ড অপসারণে আলটিমেটাম দিয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে রংপুরে বিএনপি কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। 

শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর মহানগরীর বেতপট্টিতে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি।

তিনি বলেন, আমরা চাই বিএনপির গণসমাবেশ শান্তিপূর্ণ হোক। কিন্তু বিএনপির লোকেরা পায়ে পা রেখে উসকানিমূলক পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এমন করলে তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা খেয়াল করছি, নগরীর বিভিন্ন মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসহ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচারণা সম্বলিত আওয়ামী লীগের সাঁটানো বিলবোর্ডের ওপরে বিএনপির নেতারা তাদের গণসমাবেশের বিলবোর্ড সাঁটিয়েছেন। এটা অন্যায় এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ।

সাফিউর রহমান বলেন, বিলবোর্ডের ওপর বিলবোর্ড সাঁটানোর মাধ্যমে বিএনপি উসকানি দিচ্ছে। আমরা চাই না রংপুরে কোনো বিশৃঙ্খলা হোক। বরং আমরা বিএনপিকে তাদের গণসমাবেশ সফল করতে সহযোগিতা করতে চাই। এজন্য রংপুরে আওয়ামী লীগ কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি। কিন্তু আজ আমরা উল্টো চিত্র দেখছি। বিএনপি আমাদের সাথে পায়ে পা রেখে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করেছি। যদি আজ শুক্রবার রাতের মধ্যে আমাদের বিলবোর্ডর ওপর সাঁটানো বিএনপির বিলবোর্ডগুলো সরানো না হয়, তাহলে আমরা নিজেরাই সেগুলো সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হব।

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমাদের বিলবোর্ডের ওপর লাগানো বিলবোর্ড বিএনপি দ্রুত সরিয়ে না নিলে এর জন্য কোনো রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে দায়ভার বিএনপিকেই নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল বলেন, বিএনপি যেসব শর্তে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে, সেই শর্ত তারা ভঙ্গ করেছে। রাতের অন্ধকারে বিএনপির নেতারা আমাদের সাঁটানো বিলবোর্ডের ওপর তাদের বিলবোর্ড সাঁটিয়েছে। এরা দেশে শান্তি চায় না, জ্বালাও পোড়াও করে অভ্যস্ত এই দলের কাজই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। আমরাও প্রস্তুত তাদেরকে দাঁতভাঙা জবাব দিব। যদি রংপুরে তারা বিশৃঙ্খলা করে তাদেরকে মোকাবিলা করতে শনিবার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা লীগসহ সবাই রাজপথে থাকবে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নওশাদ রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল, দপ্তর সম্পাদক শফিকুল ইসলাম রাহেল, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিভূতিভূষণ সরকার সুমন, কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শাহাজাদ আরমান, মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি সাফিউর রহমান স্বাধীন প্রমুখ।

এদিকে আওয়ামী লীগের এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু বলেন, আমরা কারও বিলবোর্ডের ওপর বিলবোর্ড সাঁটাইনি। আমরা সিটি করপোরেশন থেকে বিলবোর্ডের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিলবোর্ড সাঁটিয়েছি। এর জন্য তাদেরকে তিন দিনের ভাড়াও দেওয়া হয়েছে। এখন কার বিলবোর্ডের ওপর বিলবোর্ড সাঁটানো হয়েছে, এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তো চাইছে না আমরা সভা-সমাবেশ করি। তারা তো সারাদেশেই আমাদের সমাবেশগুলোকে ঘিরে কোনো না কোনো অযুহাত দেখিয়ে বাধা দিয়ে আসছে। এটা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক স্বভাব। তবে যত বাধাই আসুক আমরা গণসমাবেশ সফল করব। এর জন্য আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে।

রংপুর সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স বিভাগের প্রধান শামীম হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে নাম না প্রকাশের শর্তে লাইসেন্স বিভাগের আরেক কর্মকর্তা জানান, নগরীর বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন কোচিং সেন্টার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন স্টিকার লাগানো রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগ অনুমতি ছাড়া লাগানো, এ কারণে এসব অবৈধ। এগুলোর জন্য কেউই ঠিক মতো অনুমতি নেয় না। বিলবোর্ডগুলো একটা প্রতিষ্ঠানকে সিটি করপোরেশন থেকে চুক্তি অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে, তাদের মাধ্যমে অনেকেই বিলবোর্ড ব্যবহার করছেন।

প্রসঙ্গত, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানা দাবিতে বিএনপি দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করছে। গত ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ ও ২২ অক্টোবর খুলনায় সমাবেশ করেছে দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় ২৯ অক্টোবর রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে চতুর্থ গণসমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর