দেশব্যাপী কিশোর-যুবকদের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার অহরহ সাফল্য রয়েছে। সে সফলতা নিয়ে করা নিউজ বা ভিডিওগুলো ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ইউটিউবে। তাদের কর্মোদ্দীপনা দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন গ্রামীণ জনপদের বেকার যুবকরা। এমনই একজন লক্ষ্মীপুরের আবদুর রহিম হাওলাদার। বাবার ব্যবসার হাল ধরলেও ইউটিউবে ভিডিওতে উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প দেখে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এখন তিনি সফল হাঁসের খামারি।

আবদুর রহিম ছোটবেলা থেকেই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। পড়ালেখা বেশি করেননি। কিছুদিন কাজ করেছেন চট্টগ্রামে। সেখান থেকে এসে হাল ধরেন বাবার ব্যবসার। কিন্তু সব সময় নিজে কিছু একটা করার প্রত্যয়ে ছিলেন। ইউটিউব দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এখন হয়ে উঠলেন একজন সফল খামারি।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নের কাঞ্চনি বাজার এলাকার ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান হাওলাদারের ছেলে আবদুর রহিম হাওলাদার। ইউনিয়নের করইতলা বেড়িবাঁধ এলাকায় প্রায় ছয় মাস আগে হাঁসের খামার শুরু করেন।

তবে এ কাজে রহিম একা নন। তার সঙ্গে আছেন আরকে অংশীদার কাঞ্চনি বাজার এলাকার মো. আলাউদ্দিন। ২০০০ সালে প্রবাসজীবন রেখে দেশে এসে ব্যবসা করছিলেন আলাউদ্দিন। এরপর রহিমের ডাকে সাড়া দিয়ে দুজনে স্বপ্নপূরণের পথে গড়ে তুলেছেন বিসমিল্লাহ অ্যাগ্রো ফার্ম।

প্রায় ছয় মাস আগে চররুহিতা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ করইতলা এলাকায় বেড়ির পাশেই খামারটি স্থাপন করেন তারা। টিনশেড দিয়ে নির্মাণ করা খামারের পাশেই থাকার জন্য আরেকটি ছোট ঘর নির্মাণ করেন। প্রায় চার মাস আগে ৩ হাজার ৮৫০টি হাঁসের বাচ্চা দিয়ে শুরু করেন। এতে তাদের ব্যয় হয় প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

পানিতে গোসল করছে হাঁস

এ বিষয়ে আবদুর রহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউটিউবে সফল উদ্যোক্তাদের গল্পগুলো দেখে আমি নিজে কিছু করার জন্য ভাবতাম। পরে প্রতিবেশী আলাউদ্দিনকে বিষয়টা বলি। একপর্যায়ে দুজনে মিলে হাঁসের খামার দেওয়ার পরিকল্পনা করি।

প্রথম দিকে হাঁসগুলো আনার পরই বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তারা। হাঁসের শরীরে ভাইরাস আক্রমণ করে। এতে প্রায় দেড় হাজার হাঁস মারা যায়। পরে পশু চিকিৎসকের পরামর্শে তাৎক্ষণিক একটি মাচা টিনশেড তৈরি করে হাঁসগুলো স্থানান্তর করেন তারা। নিয়মিত ওষুধ খাওয়ান।

লাভ কেমন হবে, জানতে চাইলে এই দুই খামারি বলেন, বর্তমানে প্রায় দুই হাজার হাঁস রয়েছে তাদের খামারে। এ ছাড়া সম্প্রতি ৩৫০ টাকা দরে ২০০ পুরুষ হাঁস বিক্রি করেছেন তারা। হাঁস কেনাসহ এ পর্যন্ত তাদের সাড়ে সাত লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান তারা।

আবদুর রহিম ও আলাউদ্দিনের এখনকার পরিকল্পনা ডিম উৎপাদন করা। শীতে হাঁসের চাহিদা বেশি হওয়ায় অনেকেই তাদের হাঁসগুলো কিনতে আসেন। আগামী এক মাসের মধ্যে তাদের হাঁসগুলো ডিম দিতে শুরু করবে। তাই শিগগিরই তারা তাদের স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তে যেতে পারবেন বলে আশা করছেন।

পানিতে গোসল করছে হাঁস

এ বিষয়ে মো. আলাউদ্দিন জানান, হাঁস পালনে তাদের আগে কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। শুরু থেকেই তারা খামারে দুজন লোক নিয়োগ দেন। তারাই হাঁসের পরিচর্যা করছেন। এখন তাদের খামার বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনজনের কর্মসংস্থান হয়েছে। এর পাশাপাশি ছাগল পালন শুরু করেছেন। আল্লাহ সহায় থাকলে তাদের খামারটি আরও বড় হবে বলে জানান তারা।

হাঁসের খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে জামাল উদ্দিনের। তিনি বলেন, আমি এখানে কাজ করি দুই মাস হলো। হাঁস লালনপালন করতে ভালো লাগে। সকালে ছেড়ে দিই। সারাদিন বাইরে খাবার খাওয়ার পর বিকেলে আবার এদের নিয়ে আসি। হাঁসের রোগব্যাধি হয় আবার আমরা ওষুধ খাওয়াই। ভালো হয়ে যায়।

চররুহিতা গ্রামের যুবক সোহেল মাহমুদ বলেন, আবদুর রহিমের খামার দেখে আরও কয়েকজন বেকার যুবক উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টায় কাজ করছেন। যদি যুবকরা তার (আবদুর রহিম) মতো এভাবে উদ্যোক্তা হন, তাহলে নতুন করে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মসংস্থানের মাধ্যমেও বেকার সমস্যা দূর হবে। এলাকায় খারাপ কাজ কমে যাবে। যুবকরা প্রতিষ্ঠিত হতে পারবেন।

মাঝেমধ্যে প্রাকৃতিক খাবার খেতে ছেড়ে দেওয়া হয় হাসগুলোকে

তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে মূল উদ্যোক্তা আবদুর রহিম হাওলাদার জানান, দেশব্যাপী যুবকরা নতুন নতুন অনেক কিছু করছেন। তাদের এগুলো দেখেই মনে হলো, তারা পারলে আমি পারব না কেন? এমন চিন্তা ও চেষ্টা করেছি, ইনশা আল্লাহ, সফলও হব। হাঁস ও ছাগল পালনের পর শিগগিরই আমরা গরুর খামার দেব। আমরা স্বপ্ন দেখি একদিন আমাদের খামারটি বড় হবে, অনেক লোকের কর্মসংস্থানও হবে।

চররুহিতা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও ফার্মেসি ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম বলেন, আমার এলাকার আবদুর রহিম একটি হাঁসের খামার করেছেন। তাদের এ উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। তাদের খামারটিতে তিন-চারজন কাজ করে জীবিকার্জন করছেন। তাদের খামারটি টিকিয়ে রাখতে প্রাণিসম্পদ দফতরকে ভ্যাকসিনসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করব।

সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. যোবায়ের হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে হাঁসের খামার শুরু করার সময় উদ্যোক্তরা আমাদের জানাননি। পরে তাদের হাঁস অসুস্থ হলে আমাদের কাছে পরামর্শের জন্য আসেন। তাদের পরামর্শ দিয়েছি। আমার পরামর্শ অনুযায়ী ভ্যাকসিন ও রক্ষণাবেক্ষণ করায় তাদের হাঁসগুলো এখন সুস্থ রয়েছে। হাঁসের খামার লাভজনক প্রতিষ্ঠান। নতুন উদ্যোক্তাদের আমরা সব সময় সহযোগিতা করে থাকি। তাদের যেকোনো সমস্যায় প্রাণিসম্পদ দফতর পাশে আছে।

এনএ