খামারিরা বরাদ্দ হওয়া সরকারি প্রণোদনার টাকা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক দুগ্ধ খামারিদের জন্য বরাদ্দ হওয়া সরকারি প্রণোদনার প্রায় পৌনে ৩ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রণোদনার অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের না দিয়ে মসজিদের খাদেম, ওষুধ ব্যবসায়ী, দালাল চক্র ও খামার নেই এমন ব্যক্তিদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত দুগ্ধ খামারিরা।

প্রণোদনার অর্থবঞ্চিত খামারিদের অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৌলতপুরে করোনাকালীন প্রান্তিক ছোট বড় দুগ্ধ খামারিদের জন্য বরাদ্দ হওয়া সরকারি প্রণোদনার ২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা খামার নেই এমন ব্যক্তিদের দেওয়া হয়েছে। দুই শ্রেণিতে ভাগ করে জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২০ হাজার ও সর্বনিম্ন ১০ হাজার করে এ অর্থ দেওয়া হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনার আওতায় আনতে গত আগস্ট মাসে দৌলতপুরের বিভিন্ন এলাকার ২ হাজার ৪৬৬ জনের নামের তালিকা প্রেরণ করেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল মালেক।

তালিকায় বাদ পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক দুগ্ধ খামারিসহ বিভিন্ন খামারের নাম। এ তালিকা প্রস্তুত করতে সহায়তা নেওয়া হয় দৌলতপুর প্রাণিসম্পদ অফিসের সামনে গড়ে ওঠা দালাল চক্রের। তালিকা প্রস্তুত করার সময়ও ওই দালাল চক্র বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ হাতিয়ে নিয়ে খামার নেই এমন ব্যক্তিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করেছে এমন অভিযোগও রয়েছে।

অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বুধবার (৩ মার্চ) সরেজমিনে দৌলতপুর প্রাণিসম্পদ অফিসের ফটক-সংলগ্ন ওষুধ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে। তারা জানান, পশু হাসপাতাল ফটক-সংলগ্ন ওষুধ ব্যবসায়ী নুরু, নাহারুল, মসজিদের খাদেম তারিকসহ চা-বিক্রেতা থেকে শুরু করে দোকানদারা খামারির জন্য বরাদ্দ হওয়া প্রণোদনার অর্থ পেয়েছেন।

দৌলতপুরের তেলিগাংদিয়া গ্রামের দুগ্ধ খামারি আব্দুস সামাদ খান জানান, করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও সরকারের দেওয়া প্রণোদনার অর্থ তিনি পাননি। দৌলতপুরের ২৫টির বেশি ছোট বড় দুগ্ধ খামার রয়েছে; সবকটি খামারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ সরকারের প্রণোদনার টাকা তারা না পেয়ে যাদের খামার নেই; গরু-ছাগল-মুরগি কিছুই নেই তারা পেয়েছেন টাকা। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল মালেক সরকার এই অর্থ লুটপাটের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেন তিনি।

একই অভিযোগ করেছেন হরনিগাছী গ্রামের দুগ্ধ খামারি লালন, কায়ামারী গ্রামের দুলাল সরকার ও হোসেনাবাদ এলাকার মাসুম আলীসহ অনেকেই।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে দৌলতপুর প্রাণিসম্পাদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল মালেক বলেছেন, এখানে কোনো অনিয়মের সুযোগ নেই। ভোটার আইডি কার্ড দেখে তালিকা প্রস্তুত করা হয়। আগস্ট মাসে তালিকা যখন প্রস্তত করা হয় তখন অনেকের খামারে গরু ছিল, এখনও নাও থাকতে পারে। যারা এ অর্থ পাইনি তারা অভিযোগ করতেই পারেন।

তিনি আরও বলেন, প্রায় ৮ হাজার ব্যক্তির মধ্য থেকে বাছাই করে ২ হাজার ৪৬৬ জনের নামের তালিকা পাঠানো হলে তারাই সরকারের প্রণোদনার আওতায় আসে। 

এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজু আহমেদ/এমএসআর