নিজের শেষ সম্বল আয়ের উৎস ভ্যান হারিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছেন বৃদ্ধ আব্দুর রউফ গাজী। গতকাল শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে সাতক্ষীরা কদমতলা বাজার থেকে চুরি হয়ে যায় তার ভ্যানটি। হন্যে হয়ে খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পাননি ভ্যানটির।

আব্দুর রউফ গাজী সাতক্ষীরা সদরের তুজলপুর এলাকার ভাড়াটিয়া। নিজস্ব কোনো জমি-জায়গা না থাকায় তুজলপুর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন তিনি। অভাব অনটনের মধ্যে চার মেয়েকে বিয়ে দিয়ে এখন স্বামী-স্ত্রী ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। এছাড়া রউফের একটি প্রতিবন্ধী মেয়ে আছে। তার বিয়ে হয়েছিল, কিন্তু স্বামী তাকে রেখে চলে গেছে। সেই থেকে বাবার সঙ্গেই থাকছেন প্রতিবন্ধী মেয়েটা।

নিজের ব্যক্তিগত সম্পদ বলতে ভ্যানটিই ছিল তার একমাত্র অবলম্বন। স্থানীয় দুটি এনজিও থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ভ্যান কিনেছিলেন রউফ গাজী। প্রতিদিন যে টাকা আয় করেন সেটা দিয়ে কোনোদিন চাল আবার কোনো দিন খুঁদ কিনে কোনো রকমে জীবিকা নির্বাহ করেন ‍তিনি ও তার পরিবারের সদন্যরা। আয়ের উৎস ভ্যানটি হারিয়ে হতভম্ব হয়ে পড়েছেন এই অসহায় ভ্যানচালক। 

ভ্যানচালক রউফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে একটি এতিমখানার খাবার আনার কথা বলে ভ্যান ভাড়া করে দুইজন। তাদের নিয়ে সাতক্ষীরা সদরের কদমতলা বাজারে পৌঁছালে একটি কারখানার কাছে গিয়ে থামাতে বলে। কিছুক্ষণ পর তার সামনের মোড়ে একটি খাবারের বস্তা রাখা আছে সেটি আমাকে মাথায় করে নিয়ে আসতে বলে। তাদের কথা শুনে ভ্যানটি তালা মেরে বস্তা আনতে যাই। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি কোনো খাবারের বস্তা নেই। ফিরে এসে দেখি আমার ভ্যানটিও নেই।

ভ্যান চুরি হয়ে গেছে বুঝতে পেরে হাউমাউ করে কান্নকাটি করতে থাকেন রউফ। তার কান্না দেখে স্থানীয় লোকজন ছুটে আসেন। তারাও ভ্যানটি খোঁজাখুঁজি করে কোনো সন্ধান পায়নি।

তিনি হাউমাউ করে কান্নাকাটি করতে করতে বলেন, ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ভ্যানটি কিনেছে। প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হয়। এখন আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। 

ভ্যানচালক রউফের স্ত্রী রহিমা বেগম বলেন, আমাদের নিজস্ব কোনো জায়গা-জমি নেই। ঋণ নিয়ে ভ্যান কেনা হয়েছে। প্রতিদিনের আয় থেকে চাল কিনে আনতো। যেদিন আয় কম হতো সেদিন অল্প টাকায় ভাঙা চাল বা খুদ কিনে আনতো সেটা খেয়ে আমরা বেঁচে থাকতাম। ভ্যানটি হারিয়ে গেছে এখন না খেয়ে মরা ছাড়া কোনো পথ নেই। 

আব্দুর রউফের প্রতিবেশী অবেদা বলেন, অসহায় রউফ ঋণ নিয়ে ভ্যান কিনেছিল। সেটি চালিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাতো। ভ্যানটি হারানোর পর থেকে শুধু কান্নাকাটি করছে। কি খাব, আর কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবো এটা বলে বলে চিৎকার করে কান্নাকাটি করছে।

স্থানীয় ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম বলেন, ভ্যানচালক রউফ দীর্ঘ দিন ধরে এখানে ভাড়া থাকেন। স্থানীয় গ্রামীণ ব্যাংক ও আশা এনজিও থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ভ্যানটি কিনেছিলেন। শুক্রবার বিকেলে হঠাৎ তার ভ্যানটি চুরি হয়ে গেছে তার। এ ঘটনায় ভ্যানচালক রউফ ভেঙে পড়েছেন। প্রচুর কান্নাকাটি করছেন তিনি।

সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান জানান, ভ্যান হারানোর একটি লিখিত অভিযোগ থানায় জমা দিয়েছেন বৃদ্ধ আব্দুর রউফ গাজী। আমরা উদ্ধারের চেষ্টা করছি।

এমএএস