মামণিকে হারিয়ে কান্না থামছে না কৃষক সাইদুরের
সন্তানের মতোই গাভিটিকে লালন-পালন করছিলেন কৃষক সাইদুর রহমান। নাম দিয়েছিলেন ‘মামণি’। ওই নামে ডাকলে সাড়াও দিত গাভিটি। দিনে প্রায় ২০ লিটার দুধও মিলত। তাতে চলতো সংসার ও ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা।
কিন্তু এখন থমকে গেছে সংসারের চাকা। গত ১৭ অক্টোবর দিবাগত গভীর রাতে চুরি হয়ে গেছে বাছুরসহ গাভিটি। ভোরে গিয়ে পান শূন্য গোয়ালঘর। তাতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে সাইদুর রহমানের। একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে এখন তিনি নিঃস্ব।
বিজ্ঞাপন
হতভাগ্য সাইদুর রহমান রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের খেতুর এলাকার বাসিন্দা। এ ঘটনায় গোদাগাড়ী মডেল থানা ও প্রেমতলি পুলিশ তদন্তকেন্দ্র ঘুরে মামলা দায়ের করতে পারেননি সাইদুর রহমান। ফলে ১০ দিনেও চুরি যাওয়া গাভিটিকে উদ্ধার কিংবা সন্ধান পাননি।
সাইদুর রহমান জানান, গাভি-বাছুরের আনুমানিক মূল্য আড়াই লাখ টাকা। দীর্ঘ তেরো বছর ধরে গাভিটি সন্তানের মতো আগলে রেখেছেন তিনি। বিনিময়ে গাভিটি তার সংসারের চাকা সচল রেখেছে। এখন সব স্থবির।
বিজ্ঞাপন
প্রতিদিনের মতো সেদিনও গোয়াল ঘরে গাভি ও বাছুর তোলেন। ভোরে ঘুম থেকে উঠে আর পাননি। অনেক খুঁজেও সন্ধান পাননি। শেষে প্রেমতলি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে গেছেন অভিযোগ নিয়ে। সেখান থেকে পাঠানো হয়েছে থানায়। থানা পুলিশ বলছে, আগে খুঁজে আনুন, তারপর মামলা।
নিরুপায় হয়ে তিনি ফিরে এসেছেন। একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে থেমে গেছে তার জীবন-জীবিকা। চুরি হওয়া গাভিটি উদ্ধারের দাবি জানান এই কৃষক।
এলাকায় গরু চুরির হিড়িক পড়লেও কিছুই জানেন না মাটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল রানা। তিনি বলেন, বিষয়টি কেউ তাকে জানাননি। স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্যও হয়তো বিষয়টি জানান। তিনি নিজে জানতে পারলে হয়তো চুরি হওয়া গরুগুলো উদ্ধারের উদ্যোগ নিতেন।
এদিকে, সম্প্রতি গোদাগাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই গরু চুরির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সংঘবদ্ধ চোরের দলের টিকিটিও ছুঁতে পারছে না পুলিশ। ফলে গরু চুরির ঘটনা থামছেই না।
চুরি যাওয়া এসব গরু উদ্ধারে পুলিশের কোনো তৎপরতাও নেই বলে অভিযোগ করেছেন গোদাগাড়ী পৌরসভার হলের মোড় এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম। গত ১৫ অক্টোবর দিবাগত গভীর রাতে তার গোয়ালঘর থেকে তিনটি গরু চুরি হয়েছে।
শফিকুল বলেন, গরু তিনটির মূল্য প্রায় ৩ লাখ টাকা। অনেক কষ্টের সম্বল ছিল এগুলো। বেঁচে থাকার অবলম্বন ছিল। কিন্তু চোরের দল তার সেই অবলম্বন নিয়ে গেছে। থানায় এ নিয়ে মামলা করলেও পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই।
জানতে চাইলে প্রেমতলি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, মূলত মামলা হয় থানায়। তারা তদন্তভার পান। গরু চুরির অভিযোগ নিয়ে সাইদুর রহমান আসার পর তাকে অভিযোগ নিয়ে থানায় যাবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। থানা থেকে এ নিয়ে তারা কোনো নির্দেশনা পাননি।
এ বিষয়ে গোদাগাড়ী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ নয়, থানায় সাধারণ ডায়েরি নিয়ে এসেছিলেন ভুক্তভোগী সাইদুর রহমানের ভাই। তাকে জানানো হয়েছে, এ নিয়ে মামলা করতে হবে। তিনি পরে আসবেন বলে গেলেও আর আসেননি।
ওসি দাবি করেন, তারা রাত্রীকালিন টহল বাড়িয়েছেন। রাতে ফাঁকা কিংবা গরু বোঝাই সন্দেহভাজন পিকআপ পেলেই জেরা করছেন। এলাকায় গরু চুরি রোধে পুলিশ যথেষ্ট তৎপর।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএএস