স্থাপত্য আর প্রকৃতির টানে কলকাতা থেকে ঢাকার উদ্দেশে পদযাত্রায় থাকা ভারতীয় পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী গীতা বালাকৃষ্ণান নড়াইল জেলা অতিক্রম করেছেন।

রোববার (৩০ অক্টোবর) বেনাপোল-ভাঙ্গা-ঢাকা মহাসড়কে নড়াইল জেলার সীমানা অতিক্রম করেন তিনি। এর আগে সকাল ৬টায় জেলার তুলারামপুর থেকে পদযাত্রা শুরু করে মধুমতি সেতুতে গিয়ে শেষ করেন।

গীতা বালাকৃষ্ণান দক্ষিণ ভারতীয় হলেও জন্ম কলকাতায়। পেশায় তিনি একজন স্থপতি। নেশায় একজন কোস্টাল ট্র্যাকার।

সকালের কিছুটা সময় দৌড়ে, কিছুটা পথ হেঁটে তিনি নড়াইল জেলার ২৬ কিলোমিটার  পথ পাড়ি দেন। হাঁটার মাঝে বিরতির সময় কাটে শুধু স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গল্প ও বাজারের লোকজনের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময়ে।

এর মধ্যে তিনি মাইটকুমড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে স্থাপত্যের স্লাইড প্রদর্শন করেন। তাদের সঙ্গে কিছুটা সময় মাতেন খোশগল্পে।

অস্পষ্ট বাংলায় গীতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, নেশা ও পেশাকে একসঙ্গে যুক্ত করে walk for ARCAUSE মোটো নিয়ে বাংলাদেশের স্থাপত্যশৈলী ও প্রকৃতি দেখতে কলকাতা থেকে পায়ে হেঁটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছি।

শনিবার এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই পদযাত্রায় শুভকামনা জানান বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াসসহ অন্য কর্মকর্তারা। পদযাত্রার সূচনা হয় কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস প্রাঙ্গণ থেকে। 

গীতা বলেন, ‘কলকাতা-ঢাকার ৩০৬ কিলোমিটার পথ ১৭ দিনে পার হওয়ার কথা থাকলেও ঝড়ের কারণে একদিনের বিরতি দিয়েছিলাম। প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা হাঁটি। তারপর  তারপর যাত্রাবিরতি দিই। পরদিন আবার সেই পয়েন্ট থেকে যাত্রা শুরু করি। আবহাওয়া ঠিক থাকলে আগামী  ৭ নভেম্বর ঢাকায় পৌঁছানোর চেষ্টা করব।’

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না আমাকে পদ্মা সেতু হেঁটে পার হতে দেবে। তাই সেটুকু ফেরিতে পার হয়ে মাওয়া-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকায় জাতীয় সংসদে পৌঁছাব।’

কলকাতা থেকে নড়াইল পর্যন্ত আসতে তিনি পার করেছেন যশোর ও ঝিনাইদহ জেলা। নড়াইলের পর গন্তব্য গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর (ভাঙা), মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকা।

গীতা বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সংস্কৃতি-ঐতিহ্য গৌরবের। এদিকের আবহাওয়া, ভৌগোলিক অবস্থান, খাবার ও বসবাসের ধরন অনেকটা একই ধরনের।  বাংলাদেশ অনেক সুন্দর, এখানকার গ্রামগুলোয় এখনো নগরায়নের প্রভাব পড়েনি। কিন্তু যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে গ্রামে ও প্রকৃতির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারিয়ে যাবে।’

‘আমি হাঁটছি আর দেখছি, লোকজনের সঙ্গে গল্প করছি। এদের ভাষা-সংস্কৃতি দেখছি, আতিথেয়তা অনুভব করছি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাঁচিয়ে কিভাবে স্থাপনা নির্মাণ করা যায়, তা মানুষকে বুঝিয়ে সচেতন করা আমার উদ্দেশ্য। আমি মনে করি, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সচেতনতা সৃষ্টি করে স্থাপত্য শিল্পের বিকাশ ঘটাতে পারলে পশ্চিমের দেশগুলো আমাদের অনুকরণ করবে।’

গীতা বলেন, ‘স্থাপত্য শিল্পে আমরা তাদের অনুসরণ করছি। কিন্তু আমাদের আবহাওয়া ভৌগোলিক অবস্থান তাদের মতো এক নয়। তাই তাদের পথ অনুসরণ করলে আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিনষ্ট হবে এবং অপরিকল্পিত নগরায়ন হবে, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনেক ক্ষতির বিষয়। আমার মনে হয়, আর্কিটেকচার ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে পারলে  ভালো স্থাপত্য গড়ে উঠতে পারে।’

‘গ্রাম শহরের স্থাপত্যশৈলী দেখতে এ বছর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত কলকাতা থেকে দিল্লি ১৭শ কিলোমিটার হেঁটেছি। আমি মনে করি, বাংলাদেশ ও কলকাতা একই, ভাষা-সংস্কৃতি ও খাবার-আতিথেয়তা সবই এক। বাংলাদেশের স্থপতি বন্ধুদের আমন্ত্রণে পদযাত্রা শুরু করেছি। এদেশের মানুষ ও প্রশাসন অনেক আন্তরিকতার সঙ্গে আমাকে সহযোগিতা করছে।’

গীতা বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে একটি সুন্দর পৃথিবী গড়তে একসঙ্গে কাজ করছি, আশা করি আমরা সফল হব।’

কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি  হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে অসম্ভব ভালো একটি সম্পর্ক বিদ্যমান। সেটাকে আরও দৃঢ় করতে গীতা যাওয়ার পথে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন, পথে অনেকের সঙ্গে দেখা হবে। আমরা যেটা বলি পিপল টু পিপল কনট্যাক্ট,  তা আমরা আশা করছি গীতার জার্নির মধ্য দিয়ে আরও শক্ত হবে। গীতার উদ্দেশ্য শুভ। একটি ভালো স্থাপত্য বা স্থাপত্য চিন্তা কী করে মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে পারে, তা নিয়ে বালাকৃষ্ণান ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে এই পদযাত্রা করছেন।’

সজিব রহমান/আরএইচ