শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি গ্রামগুলোতে বন্য হাতি তাণ্ডব শুরু করেছে। বাড়িঘর ও ফসলি জমিতে আক্রমণ চালাচ্ছে। এতে আতঙ্কিত কৃষকরা। তারা ফসল রক্ষায় রাতে মশাল জ্বালিয়ে, ঢোল বাজিয়ে ধান ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের গহিন অরণ্য থেকে ক্ষুধার্ত বন্য হাতি খাবারের সন্ধানে উপজেলার সীমান্তবর্তী নাকুগাঁও স্থলবন্দর এলাকায় চলে আসছে। নয়াবিল ইউনিয়নের নাকুগাঁও, দাওধারা, কাটাবাড়ি, ডালুকোনা; পোড়াগাঁও ইউনিয়নের আন্ধারুপাড়া, খলচান্দা, বুরুঙ্গা, কালাপানি, বাতকুচি, সমশ্চুড়া; রামচন্দুকুড়া ইউনিয়নের পানিহাতা, মায়াঘাসি, তাড়ানি ও কালাকুমা সীমান্তবর্তী এলাকার প্রায় ৮০০ একর জমির আমন ধান পেকে এসেছে। এখনো তেমনভাবে ধান কাটা শুরু হয়নি। কৃষকরা হাতির আতঙ্কে কাঁচা-আধা পাকা ধান ঘরে তুলছেন। দিনে তেমন তাণ্ডব না চালালেও রাতে হাতির দল লোকালয়ে নেমে আসে। তারা নষ্ট করছে ধানসহ বিভিন্ন ফসল। 

প্রতি বছরই ধান পাকার মৌসুমে হাতির দল সন্ধ্যার দিকে খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসে। সম্প্রতি সরকারের বন বিভাগ থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে বন্যহাতি দ্বারা নিহত পরিবারকে ৩ লাখ টাকা, আহতকে ১ লাখ টাকা ও ফসলের ক্ষতি হলে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।

খলচান্দা গ্রামের বাসিন্দা পরিমল কোচ জানান, বর্তমানে পাহাড়ে আগাম জাতের আমন ধান পাকা শুরু হয়েছে। আমি ১ একর জমিতে আগাম জাতের আমন ধান লাগাইছি। এখন যদি হাতি এই ধান খাইয়া যাই, আমরা চলমু কেমন কইরা? আমরা রাত হলেই মশাল নিয়া ধান ক্ষেতের আইলে বইসা থাকি।  

উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের নাকুগাঁও এলাকার বাসিন্দা রামিম মিয়া বলেন, ‘ভাই কী কমু কন। কয়দিন ধরে হাতি আমাদের এলাকায় আছে। দিনি তেমন আক্রমণ না করলেও রাতে ঘুমাবার পাই না। আমরা দিনে ঘুমাইয়া রাতে জমি পাহারা দেই। যদি রাতে ঘুমাই হাতি আইয়ে সব ধান খেয়ে ফেললে আমরা বাঁচবো কেমন কইরা? আমরা তো এই কৃষি আবাদের ওপর নির্ভর কইরা সংসার চালায়।

মালাকোচা এলাকার বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন, ‘আমাগো দুটি সবজি ক্ষেত হাতি খাইছে। ক্ষেতে বরবটি, লাউসহ বিভিন্ন শাক-সবজি ছিল। এখন কিছুই নেই। বাড়িঘর ও ফসলি জমিতে আক্রমণ চালিয়ে আগের বছরও মেলা ধান খাইয়া ফেলছে। এইবারও রাতে হাতি আইতাছে। এই পাকা ধান যদি খাইয়া ফেলে, আমরা না খাইয়া থাকব। কখন বাড়িতে আইয়া আক্রমণ করে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’

ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, বন্য হাতির তাণ্ডবে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তালিকা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ পাবেন। এ নিয়ে আমরা সব সময় সর্তক অবস্থায় আছি। আমারা এলাকাবাসীকে তাদের নিজের জানমাল রক্ষায় সচেতন করছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর কবির বলেন, এই এলাকায় হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের। পাহাড়ি এলাকায় বন্য হাতি বাড়ি-ঘর ও ফসলের মাঠে তাণ্ডব চালিয়ে ক্ষয়ক্ষতি করে আসছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের নানা প্রণোদনা ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বন্য হাতির তাণ্ডবে যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। আমরা হাতি আক্রান্ত এলাকায় খোঁজখবর রাখছি ও ফসল রক্ষায় কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।

এসপি