১৭১ বছর ধরে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে নাটোরের প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ দিঘাপতিয়া পি এন উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে দুইশ বছরের পুরোনো একটি বটগাছ।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮৫২ সালে বিদ্যোৎসাহী রাজা প্রসন্ন নাথ রায় বাহাদুর প্রথমে ‘প্রসন্ন নাথ একাডেমি’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করেন। পরবর্তীতে ১৮৫২ সালের ১ জানুয়ারি তার নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে স্কুলের নামকরণ করা হয় ‘দিঘাপতিয়া পি এন হাইস্কুল’। ৫ দশমিক ৭৯ একর জমির ওপর নির্মিত একটি প্রশাসনিক ও দুটি একাডেমি ভবন নিয়ে স্কুলের গোড়াপতন হয়। বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে দুইশ বছরের ঐতিহ্যপূর্ণ বিশাল বটগাছ মানিক।

জানা গেছে, প্রায় ১৫ যুগ ধরে মনোরম পরিবেশে শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় এক হাজারের ওপরে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে ২১ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে। প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব রয়েছে।

বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর যাতে অর্থাভাবে বন্ধ না হয়ে যায় এবং সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য রাজা বাহাদুর ১৮৫২ সালে একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেন। এই ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৪০০ টাকা। ফান্ড প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই তিনটি প্রতিষ্ঠান নিয়মিত অনুদান পেয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান আমলে নাটোর দাতব্য চিকিৎসালয় ও রাজশাহী সদর হাসপাতাল সরকারিকরণ হলে অনুদানের সমস্ত অর্থের দাবিদার পি এন হাইস্কুল হলেও ১৯৬৯ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থ আর পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় আর বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে শুধু চিঠি লেনদেন হয়েছে। 

১৭১ বছরের পুরোনো পিতলের ছুটির ঘণ্টা, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকাসহ ১ হাজার ৪৭০টি মূল্যবান বই ছিল। এর মধ্যে ইংরেজি-বাংলা সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান, অর্থনীতি ও পৌরনীতির বই রয়েছে। পারস্যের কবি ফেরদৌসি রচিত ‘শাহনামা’, শেখ শাদীর ‘গুলিস্তাবোস্তা’ এবং স্বর্ণবেষ্টিত চারখানা বই বিদ্যালয়ের পাঠাগারে সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিষ্ঠানের প্রাচীন মূল্যবান বই, অনুলিপিসহ মূল্যবান কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যায়।

স্কুলের মূল দুটি ভবনের মধ্যে একটি ভবনের অস্তিত্ব আগেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। শুধু মূল একটি ভবন এখনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। তবে মূল ভবনটির অবস্থা ভালো নয়। স্কুলে ৭টি কক্ষ বিশিষ্ট পুরোনো প্রশাসনিক ভবন রয়েছে। এত বছরের পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণের জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

১৮৯৫ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন রুদ্রচন্দ্র মল্লিক, যোগেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, নীল মাধব ফনি, গোপেন্দ্র কৃষ্ণ সিংহ, দেবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, বিজয় গোবিন্দ চংদার, শহিদুল্লাহ, নুর মোহাম্মদ, কাশেম আলী, মফিজ মিয়া ও বর্তমান প্রবীণ শিক্ষক আব্দুল মফিজ।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা তাপসী রানী ভট্টাচার্য্য বলেন, দিঘাপতিয়া পি এন উচ্চ বিদ্যালয় ১৮৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত। রাজার এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করে আমি গর্বিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। সরকারিকরণ হলে প্রাচীন এ প্রতিষ্ঠান তার নিজস্ব গৌরব ফিরে পাবে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন, আমাদের এই প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় হাজারের ওপর ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে। প্রতিষ্ঠানটি ১৭১ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে চলেছে। আমরা সরকারের কাছে ঐতিহ্যপূর্ণ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জাতীয়করণের দাবি জানাই।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলিম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নাটোরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দিঘাপতিয়া পি এন উচ্চ বিদ্যালয়। এই প্রতিষ্ঠানটি ১৮৫২ সালে রাজা প্রসন্ন নাথ রায় বাহাদুর প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে প্রতিষ্ঠানটি নাটোরে শিক্ষা প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে পুরানো ও ঐতিহ্য বহনকারী প্রতিষ্ঠানটি আজও জাতীয়করণের মুখ দেখেনি। আমরা কয়েক বার জাতীয়করণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র পাঠিয়েছি কিন্তু কোনো ফল আসেনি। আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারীরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণের জন্য জোর দাবি করছি।

এসপি