কিশোরগঞ্জে একটি বেসরকারি হাসপাতালে পিত্তথলির পাথর অপারেশনের সময় পিত্তনালি কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শহরের হযবতনগর এলাকায় দি খিদমাহ জনতা হাসপাতালের পরিচালক ডা. আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে গত ২৫ অক্টোবর সিভিল সার্জন ও ২৭ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী রোগী বিউটি আক্তারের স্বামী মো. মুজিবুর রহমান।

সিভিল সার্জন ডা. মো. সাইফুল ইসলাম ও সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।

রোগী বিউটি আক্তারের স্বামী মো. মজিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ২০২১ সালে ৩ সেপ্টেম্বর আমার স্ত্রী অসুস্থ হলে বাসার কাছেই খিদমাহ হাসপাতালে নিয়ে যাই। ডা. মজিদ বলেন- ‘পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে। সাধারণ অপারেশন, আমি নিজেই করব, কোনো সমস্যা নেই।’ অপারেশনের পর আমার স্ত্রীর অবস্থা খারাপ হতে লাগল। আবার খিদমাহ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডা. মজিদ পরীক্ষা করে বলেন- ‘জন্ডিস বেড়ে গেছে। আরও এক সাপ্তাহ পরে আসেন এখন ডাক্তার নেই।’

রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে আমি বলি- ডা. নাজমুল হাসানের কাছে যাই। ডা. মজিদ বলেন- যান। ডা. নাজমুল হাসান এমআরসিপি পরীক্ষা করে বলেন- ‘রোগীর অবস্থা ভালো না, টাকা বেশি খরচ হলেও ঢাকায় নিয়ে যান।’ পরে ঢাকার পিজি হাসপাতালের নিয়ে ডা. শামসুন্নাহারকে দেখালে তিনি বলেন- ‘দ্রুত অপারেশন করতে হবে। না হলে রোগী মারা যাবে।’ পরে ল্যাবএইডে নিয়ে গেলে ডা. জুলফিকার রহমান খান আমার স্ত্রীর অপারেশন করেন। এখন আমার স্ত্রী সুস্থ। 

মজিবুর রহমান বলেন, এই অপারেশন করাতে গিয়ে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি পথে বসে গেছি। ১২ লাখ টাকার মতো আমাকে খরচ করতে হয়েছে ডা. মজিদের ভুল চিকিৎসার জন্য। পরে ডা. মজিদের কাছে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি আমাকে এক লাখ টাকা দিতে চান। এছাড়াও আমার সঙ্গে মশকরা করেন। তাই এর প্রতিকার চেয়ে সিভিল সার্জন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছি। সঙ্গে থানায়ও অভিযোগ করেছি। আমি ডা. মজিদের বিচার চাই ও ক্ষতিপূরণ চাই।

ভুক্তভোগী রোগী বিউটি আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার পিত্তথলিতে পাথর হলে দি খিদমাহ জনতা হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আব্দুল মজিদ না কেটে ছিদ্র করে অপারেশনের কথা বলেন। পরে আমাকে অজ্ঞান করে কয়েকটি চিদ্র করেও অপারেশন করতে না পেরে বলেন- ‘চর্বি বেশি, কেটেই অপারেশন করতে হবে।’ পরে আমাকে কেটে অপারেশন করা হয়। তারপরও সেই অপারেশনে আমার পিত্তনালি কেটে ফেলেন ডাক্তার মজিদ।

বিউটির প্রতিবেশী হৃদয় আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভুক্তভোগী রোগী আমার প্রতিবেশী আন্টি। গত বছর উনার ভুল চিকিৎসা হয়েছিল। উনার পিত্তথলিতে পাথর হয়েছিল। ভুল চিকিৎসায় উনার পিত্তনালী কেটে ফেলেন ডা. মজিদ। এতে আন্টির অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গেছিল। কিশোরগঞ্জের অনেক ডাক্তার দেখিয়ে পরে ল্যাবএইডে গিয়ে অনেক টাকা খরচ করে চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়েছেন। এই টাকাগুলো জোগাড় করতে সব শেষ করে ফেলেছেন উনার পরিবার। এজন্যই উনাদের পরিবারে অভাব-অনটন লেগেই আছে। আমি প্রতিবেশী হিসেবে উনার ভুল চিকিৎসায় যে ক্ষতি হয়েছে তার প্রতিকার চাই। এর সঙ্গে এটাও চাই ডা. মজিদ যেন এ রকম চিকিৎসা না করতে পারেন। 

দি খিদমাহ জনতা হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আব্দুল মজিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, চিকিৎসা কখনো ভুল হয় না। স্থানীয় কমিশনার এক দিন এই রোগীর চিকিৎসার ব্যাপারে কথা বলতে আসছিলেন। আমি চিকিৎসার কাগজপত্র দেখতে বলছি। তবে অপারেশনটা নিজেই করেছিলেন বলে স্বীকার করেন তিনি। 

এ বিষয় কিশোরগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ জানান, ভুক্তভোগীর স্বামী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে নির্দেশ পেলেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এসকে রাসেল/আরএআর