সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে ১০ লাখ টাকায় নির্মিত ম্যুরালের ডিজাইন সরকারের অনুমতি ছাড়াই পরিবর্তন করা হয়েছে। ম্যুরালের একদিকে বঙ্গবন্ধু ও অন্যদিকে শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি থাকার কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তার ছোট ভাই ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুকনের ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে। 

ম্যুরালের ডিজাইন পরিবর্তনের বিষয়টি স্বীকার করে ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির হাসান জানান, বেআইনিভাবে কেন ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়েছে তা জানতে চেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ পাঠানো হবে। জবাব পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
তবে ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুকনের দাবি-  ম্যুরাল ডিজাইন মোতাবেকই করা হয়েছে। 

জানা যায়, এলজিইডির ধর্মপাশা উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরিফ উল্লাহ খান চলতি বছরের ২৩ জুনে দেওয়া চিঠিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ধর্মপাশার মেসার্স রানা ট্রেডার্সকে ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৭২৪ টাকা চুক্তি মূল্যে ৩০ দিনের মধ্যে মধ্যনগর সেতু সংলগ্ন স্থানে ম্যুরাল নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দেন। ওই ম্যুরালের ডিজাইনে একপাশে বঙ্গবন্ধু ও আরেক পাশে কেবল শেখ হাসিনার ছবি থাকার কথা। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তার ছোট ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুকনের ছবি যুক্ত করা হয়েছে। 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা ট্রেডার্সের পরিচালক মো. ইজাজুর রহমান রানা বলেন, আমি কাজটি করিনি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেব আমার লাইসেন্সটি নিয়ে চুন্নু মিয়া নামে ধর্মপাশার একজনকে দিয়ে কাজটি করিয়েছেন।

চুন্ন মিয়ার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেবের নির্দেশে ম্যুরালের ডিজাইন পরিবর্তন হয়েছে। নেত্রকোণার আরও অনেক উপজেলায় এভাবে ম্যুরাল করা হয়েছে।

ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুকন বলেন, একজনের লাইসেন্স দিয়ে আরেকজন কাজ করার সুযোগ নেই। এসব মিথ্যা ও বানোয়াট কথা। ম্যুরালের ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়নি। আমাদের পাশের নেত্রকোণা, কমলাকান্দা, মদনে একই ডিজাইনে ম্যুরাল করা হয়েছে। সেখানকার ম্যুরালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী মহোদয় ও বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে। ম্যুরালটির দুই পাশের এক দিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের ছবি রয়েছে, অন্যদিকে শুধু বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে। তবে ম্যুরালে তার নিজের ছবি যুক্ত করার বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি। 

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ-তাহিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, এ বিষয়ে কিছু জানি না। এটা উপজেলা প্রশাসনের কাজ। তবে যাই হয়েছে সেটি সংশোধনযোগ্য। কাজটি নির্মাণাধীন আছে, পুনরায় করা যাবে। 

ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি এডিপির বরাদ্দে প্রায় ১০ লাখ টাকায় নির্মাণ করা হয়েছে। এই ডিজাইন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের করা। এখানে সংসদ সদস্যের ছবি লাগানো যায়। তবে ডিজাইন পরিবর্তন করতে হলে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ডিজাইন পরিবর্তনের অনুমোদন নিতে হবে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পাওয়া গেলেই কেবল ডিজাইন পরিবর্তন করা যায়।

তিনি আরও বলেন, এমপি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের ছবিসহ ম্যুরাল নির্মাণের কোনো অনুমতি মন্ত্রণালয় থেকে নেননি। মূল ডিজাইনের বাইরে গিয়ে অননুমোদিত ডিজাইনে কেন ম্যুরাল নির্মাণ হলো তার কারণ দর্শানোর জন্য ঠিকাদারকে শোকজ করা হবে। জবাব পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

সোহানুর রহমান সোহান/আরএআর