ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভোলায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, সিত্রাংয়ের কারণে ভোলার ৭ উপজেলায় ৭ হাজার ৯২২টি বসতঘর এবং মাছ, গবাদি পশু, গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটিসহ বিভিন্ন খাতে ক্ষতি হয়েছে ২০০ কোটি টাকার মতো। যদিও অনেকের দাবি, সরকারি সহায়তার আশায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া ক্ষয়-ক্ষতির তালিকা অনেকটা বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। 

মনপুরার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং অন্যান্য এলাকার মৎস্যঘেরের যে ক্ষতি হয়েছে তা এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এমনকি জেলা প্রশাসনের তালিকায় কৃষিখাতের ক্ষয়-ক্ষতির উল্লেখ নেই। 

ভোলার কৃষিবিদ এইচ এম শামীম জানিয়েছেন, এ বছর ভোলায় ১ লাখ ৭৫ হাজার ৫৬৮ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৩৭ হাজার মেট্রিক টন। তবে সিত্রাংয়ের কারণে ৮-১০ হাজার মেট্রিক টন ফলন কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া ৩০০ হেক্টর জমির সবজি, কলা, পেঁপে এবং পান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মূল্য ৩০০ কোটি টাকা। 

কৃষক মো. ইব্রাহিম বলেন, আমাদের এক একর জমির ধান বন্যায় তলিয়ে গেছে। এখন চেয়ারম্যান, মেম্বাররা যদি সরকার থেকে আমাদের কিছু এনে দেয়, তাইলে তো বাঁচতে পারব। এছাড়া বাঁচার কোনো উপায় নেই।

আব্দুল খালেক বলেন, আমার নিজের ২৫-৩০টা কলা ও পেঁপেগাছ পড়ে গেছে। এলাকার অন্যান্যদেরও গাছ ঝড়ে ভেঙে গেছে। পানের বরজ নষ্ট হয়েছে। আমরা এখন খুবই কষ্টের মধ্যে আছি।

জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ঝড় শেষ হলেও এখনো মাঠে জলাবদ্ধতা থাকায় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সহায়তা চাইলেও তারা কিছুই করতে পারছেন না।

ভোলার চরসামাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন মাতব্বর বলেন, ঝড়ে আমাদের কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আমাদের কাছে আসছেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রণোদনা না আসায় আমরা কৃষকদের জন্য কিছুই করতে পারছি না। তাই সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের জন্য প্রণোদনার দাবি জানাচ্ছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাসান ওয়ারিসুল কবীর জানিয়েছেন, কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। তাদের সহায়তার জন্য এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তবে ক্ষয়-ক্ষতির তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ থেকে প্রণোদনা পাওয়া গেলে তা কৃষকদের মাঝে সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়া হবে। 

প্রসঙ্গত, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ৮৪ মেট্রিক টন চাল এবং ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘর নির্মাণের জন্য ৪ হাজার বান্ডিল টিনের চাহিদা দেওয়া হলেও কৃষিখাতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জেলা প্রশাসন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো চাহিদাপত্র পাঠায়নি বলে জানা গেছে।

এসপি