রাকিবুল ইসলাম

চুয়াডাঙ্গায় এক ফার্মেসি মালিকের ভুল চিকিৎসায় রাকিবুল ইসলাম (১৪) নামে এক মাদ্রাসাছাত্র দুই হাত হারাতে বসেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের গ্রীসনগর বাজারের শাহ মেডিকেল ও ফার্মেসির মালিক মিলন ওই মাদ্রাসাছাত্রের চিকিৎসা করেন। 

ভুক্তভোগী রাকিবুল একই ইউনিয়নের বাষট্টি আড়িয়া গ্রামের মাদ্রাসাপাড়ার এনামুল হকের ছেলে। সে বাষট্টি আড়িয়া দাখিল মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। তার দিনমজুর বাবা এখন ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। 

জানা যায়, পাঁচ মাস আগে রাকিবুলের পায়ে ঘা বা ক্ষতের সৃষ্টি হয়। তার বাবা স্থানীয় একটি ফার্মেসির দোকানে গিয়ে ছেলের পায়ের সমস্যার কথা জানালে দোকানদার মিলন তাকে চিকিৎসা দেয়া শুরু করেন। এক সপ্তাহে মিলন রাকিবুলের দুই হাতে পাঁচটি ইনজেকশন করেন। এরপর থেকে তার দুই হাতে নানান সমস্যা দেখা দেয়। তার দুই হাতের কব্জির নিচে মাংসপেশি ক্ষয় হয়ে দেবে যাচ্ছে। ভারি কোনো কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। 

রাকিবুলের বাবা ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় ৫ মাস আগে আমার ছেলের পায়ে ঘা জাতীয় কিছু দেখতে পাই। এরপর শাহ মেডিকেল ও ফার্মেসিতে ছেলেকে নিয়ে যাই। ফার্মেসির মালিক জানায়, ছেলের চিকিৎসা তার ওখানেই হবে। এক সপ্তাহ পরপর ছেলের দুই হাতে মোট পাঁচটি ইনজেকশন দেন। এরপর থেকে আমার ছেলের দুই হাতের কব্জির নিচে মাংসপেশি দেবে যাচ্ছে। হাত দিয়ে ভারি কোন কিছুই তুলতে পারছে না। 

তিনি আরও বলেন, ছেলেকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। চিকিৎসক জানান এখানে ছেলের চিকিৎসা হবে না। ঢাকাতে কিংবা রাজশাহী নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। আমি দিন আনি দিন খাই। এখন ছেলের কিভাবে চিকিৎসা করাব। 

শিশু রাকিবুল ইসলাম বলেছে, আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে৷ হাত নাড়াচাড়া করতে পারি না। কোনো কিছু উঠাতে পারি না। ইনজেকশন দেওয়ার পর থেকেই এমন হচ্ছে।

শাহ মেডিকেল ও ফার্মেসির মালিক মিলন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ভুল হয়েছে। আমি শিশুটির পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। গ্রামের লোকজন বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। 

চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার (এমওসিএস) ডা. সাজিদ হাজান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি শিশুটিকে দেখেছি। বিষয়টি জটিল হয়ে গেছে। দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন। তার দুই হাতের কব্জির নিচে মাংসপেশি ক্ষয় হয়েছে৷ চামড়ার রঙ পরিবর্তন হয়েছে। স্কিন রিকভারি করাটা খুবই কঠিন। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলতে পারবেন। ঢাকা কিংবা রাজশাহীতে চিকিৎসা করালে ভালো হয়।

চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাত হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। ফার্মেসি দোকানদার কোনোভাবেই চিকিৎসা সেবা দিতে পারে না। ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আফজালুল হক/আরকে