প্রভাব খাটিয়ে একটি এমপিওভুক্ত স্কুলে মিনি গার্মেন্টস স্থাপনের অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধানের বিরুদ্ধে। স্কুলটির চার তলায় তিনটি শ্রেণিকক্ষ দখল করে চলছে তার গার্মেন্টস পণ্য ও স্টক লটের ব্যবসা। উপজেলার মদনগঞ্জের মাধবপাশা এলাকায় আলহাজ্ব খোরশেদুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এক মাস ধরে স্কুলের চতুর্থ তলার তিনটি কক্ষ দখল করে সেখানে গার্মেন্টস ও স্টক লটের ব্যবসা সাজিয়েছেন কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের সহায়তায় খোরশেদুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। ওই ভবনের প্রতি তলায় মোট তিনটি করে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। ওই ভবনের চতুর্থ তলার পুরো অংশে নিজের প্রভাব খাটিয়ে গার্মেন্টস ও স্টক লটের ব্যবসা গড়ে তুলেছেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, তিনটি কক্ষের দুটিতে সারি সারি করে রাখা হয়েছে গার্মেন্টস পণ্যের কাঁচামাল ফেব্রিক্স, একটিতে তৈরি হওয়া রপ্তানিযোগ্য মালামাল কার্টন করে রাখা হয়েছে এবং আরেকটি কক্ষে বেশ কয়েকটি মেশিন ও আয়রনের টেবিলসহ প্রয়োজনীয় কিছু উপকরণ। 

তবে ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দাবি এখানে শুধু মালামাল রাখা হয়েছে। কোনো ধরনের কারখানার কার্যক্রম এখানে চলছে না। তবে তার বক্তব্য নেওয়ার জন্য খোঁজ করা হলে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার খোঁজ নিলে ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক এমএ সালাম জানান, প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) তার ব্যবহৃত মুঠোফোন তার কাছে রেখে কোথায় যেন চলে গেছেন, তাকে আশেপাশে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বন্দরের আলহাজ্ব খোরশেদুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪১৫ জন। এছারাও স্কুলটিতে পাঠদানে ১ জন এমপিওভুক্ত সহকারি শিক্ষকসহ মোট ১০ জন শিক্ষক রয়েছেন। তবে ওই স্কুলে নেই কোনো প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকের পরিবর্তে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে আছেন মো. দিদার হোসেন। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি প্রথমে মুঠোফোনে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে এই প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার কথা বলেন। তবে সুবিধা করতে না পেরে তিনি তাৎক্ষণিক সটকে পড়েন।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সটকে পড়ায় ওই স্কুলের বাংলা ও গণিতের সহকারী শিক্ষক লাভলী আক্তারের কাছে স্কুলে এভাবে মালামাল রাখা বৈধ কিনা জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এভাবে স্কুলে মালামাল রাখা ঠিক না। তার (চেয়ারম্যান) এত টাকার মালামাল নষ্ট হয়ে যাবে, তাই সমায়িক সময়ের জন্য রেখেছেন। 

এগুলো রাখার অনুমতি কে দিয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারব না, যিনি এখানে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন তিনি বলতে পারবেন। আমি এখানে সহকারী শিক্ষক হিসেবে আছি।

গণিতের শিক্ষক এমএ সালাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের স্কুলের চতুর্থ তলায় কোনো ক্লাস হয় না। বলতে পারেন অনেকটা পরিত্যক্ত। শ্রেণিকক্ষ খালি আছে তাই সাময়িক সময়ের জন্য রেখেছে। আবার সরিয়ে নেবে। 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এভাবে গার্মেন্টস পণ্য স্টক করা ঠিক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এভাবে রাখা ঠিক না। তবে যতদুর জানি, তিনি (চেয়ারম্যান) এগুলো এখান থেকে সরিয়ে  নেবেন। 

বন্দর উপজেলা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আরিফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ধরনের কোনো তথ্য আমার জানা নেই। কতদিন ধরে সেখানে এগুলো রাখা হয়েছে সেই হিসাবও আমার কাছে নেই। সুতরাং অনুমতি দেওয়ারতো প্রশ্নই আসে না। বেসরকারি স্কুলের সব কিছু দেখে ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি। এখানে আসলে আমাদের তেমন কিছু করার থাকে না, তবে ওই সব মালামাল সরিয়ে নিতে তাদের নির্দেশনা দিব। তারা যদি তা না মানেন তবে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাদের স্বীকৃতি অথবা এমপিও স্থগিত করা হতে পারে।

এদিকে অভিযুক্ত কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধানের মুঠোফোনে বার বার ফোন করেও  সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। 

তবে আলহাজ খোরশেদুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. দিদার হোসেন তার  (চেয়ারম্যান) সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে জানান- চেয়ারম্যান বিদ্যালয়ে এসে বক্তব্য দেবেন। এরপর ৩০ মিনিট অপেক্ষা করেও তার দেখা মেলেনি।

আবির শিকদার/আরএআর