রাজবাড়ী সদর উপজেলার পদ্মা নদীতে অসময়ে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এরই মধ্যে পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়েছে দুই ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামের প্রায় ৬শ বিঘারও বেশি ফসলি জমি। এছাড়া ভাঙনে বিলীন হয়েছে নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের সিসি ব্লক। ঝুঁকিতে রয়েছে রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধ। ফলে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, পানি কমতে শুরু করায় পদ্মায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন ঠেকাতে কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারা দায়সারাভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

সরেজমিনে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চর সিলিমপুর, বড়চর বেনীনগর, কালিতলা ও বরাট ইউনিয়নের উড়াকান্দা, অন্তরমোড় এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমতে থাকায় নদীতে স্রোতও বেড়েছে। নদীতে বালুভর্তি বাল্কহেড চলাচল করছে। এতে বড় বড় ঢেউ নদীর পাড়ে এসে ধাক্কা খাচ্ছে। তীব্র স্রোতের কারণে পদ্মায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে পদ্মার ভাঙনে শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়া ভাঙনে ৮০ মিটার সিসি ব্লক নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। যে কারণে শুষ্ক মৌসুমেও পদ্মা তার আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। এছাড়া উত্তোলিত বালু বহনের জন্য বড় বড় কার্গো বা ট্রলার ব্যবহার করা হয়। এসব কার্গো বা ট্রলার নদীপাড়ের পাশ দিয়ে চলাচলের সময় নদীতে ব্যাপক ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। এতে নদীভাঙনের তীব্রতা আরও বেড়ে গেছে।

চর সিলিমপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কৃষক ফজলে মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘শুকনো মৌসুমে নদীভাঙন আগে কখনো দেখিনি। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করার কারণেই এ পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। অবিলম্বে বালু উত্তোলন বন্ধ করে নদীভাঙনের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন তিনি।’

বড়চর-বেনীনগর এলাকার কৃষক আলমাস শেখ, ওয়াহেদ ব্যাপারী, সুরুজ ফকির, ইসহাক সরদারসহ কয়েকজন কৃষক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্ষা মৌসুমে সাধারণত পদ্মায় ভাঙন দেখা যায়। কিন্তু এবার শুকনো মৌসুমেই পদ্মার ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে শত শত বিঘা ফসলি জমি। হঠাৎ করে ফসলি জমি হারিয়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। গত এক সপ্তাহে অন্তত ৬ শতাধিক বিঘার বেশি বিভিন্ন ধরনের ফসলসহ জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দ্রুত ভাঙন ঠেকানো না গেলে অনেকেই তাদের জমিজমা, ভিটেমাটি হারাবে।

কালীতলা এলাকায় নদীর পাড়ে ক্ষেত থেকে সবজি তুলতে আসা রাবেয়া আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, নদীর পাড়ে কয়ডা লালশাক বুনছিলাম। কয়েক দিনের টানা ভাঙনে তা বিলীন হয়ে গেছে। এখন ৪ বিঘা জমিতে শীতকালীন সবজি আছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে এগুলোও থাকবে না। এই চার বিঘা জমিই এখন আমার সম্পদ। এটুকুও যদি নদীর পেটে চলে যায়, তাহলে আমি সর্বশান্ত হয়ে যাব।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, নদীর পানি কমায় স্রোত বৃদ্ধি পেয়ে অসময়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে অস্থায়ীভাবে ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। তবে দুই-এক দিনের মধ্যে পানি আরও কমে যাবে। তখন নদী শান্ত হয়ে যাবে।

মীর সামসুজ্জামান/এসপি