চুয়াডাঙ্গায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রাবেয়া খাতুন (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (৫ নভেম্বর) রাত ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। রাবেয়া খাতুন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের আকন্দবাড়িয়া গ্রামের ফার্মপাড়ার ফারুক হোসেনের স্ত্রী। 

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুরে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হন রাবেয়া খাতুন। রাত ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। গত সাত দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুসহ ১৭৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সর্বশেষ শনিবার সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত নতুন ২০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া প্রতিদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে ১০০-১৫০ জন ডায়রিয়া রোগী।  

চিকিৎসকরা বলছেন, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় গ্রহণ এবং অনিরাপদ পানির কারণে ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, দুটি কক্ষ নিয়ে ডায়রিয়া ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে কোনো শয্যা খালি নেই। ফলে মেঝেতেই শিশুসহ রোগীদের থাকতে হচ্ছে। জায়গা না থাকায় বাইরের বারান্দার মেঝেতে রোগীদের চিকিৎসা চলছে।  

আফরোজা খাতুন নামে এক নারী বলেন, হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কোনো জায়গা নেই। আজ তিন দিন ধরে মেঝেতে আমার চিকিৎসা চলছে। 

ইসহাক নামে এক যুবক বলেন, দুদিন ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত আমি। গত শুক্রবার দুপুরে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। ওয়ার্ডে কোনো জায়গা নেই। মেঝেতেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে সব ধরনের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।

সাদিয়া আফরিন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, গতকাল শনিবার বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে ফুচকা খেয়েছিলাম। সন্ধ্যা থেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। 

ডায়রিয়া ওয়ার্ডের দায়িত্বরত নার্সরা জানান, এই কয়েক দিনে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই  বয়স্ক। শিশু রোগী কম আছে। খুব বেশি একটা চাপ নেই। এমন হতে থাকলে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হবে আমাদের।

রাবেয়া খাতুনের ছেলে কানন বলেন, শনিবার সকালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন আমার মা। স্থানীয় চিকিৎসকের নিকট নেওয়া হলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাকে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। এরপর থেকে কিছুটা সুস্থবোধ করেন তিনি। রাত ১১টার কয়েক মিনিট আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আমার মাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. লিওন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গতকাল শনিনার দুপুরে রাবেয়া খাতুন ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন। হার্ট ও ডায়াবেটিক গুরুতর অবস্থা ধারণ করায় তাকে রাত ১০টা ৫৮ মিনিটের দিকে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে রেফার্ড করি। এর দুই মিনিট পরই রাবেয়া খাতুনের মৃত্যু হয়।

আফজালুল হক/আরএআর