উত্তরাঞ্চলের শস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত বগুড়া। এখানকার কৃষকেরা বারো মাস বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে থাকেন। মৌসুমের আগে শীতের ফসল চাষ করে বাজারে তুলে লাভবান হচ্ছেন অনেক চাষী। কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে জমিতে হাল চাষ, চারা রোপণ, ক্ষেতে পানি দেয়া ও আগাছা পরিষ্কার করাসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় কাটে এখানকার কৃষকেদের।

বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় এসব সবজি। বগুড়া জেলার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে নানা ফসল। এখানকার উৎপাদিত ফসল দেশের রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরের বাজারে বিক্রি হয়ে এখন রপ্তানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। 

বগুড়া জেলায় ২৪ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে সারাবছর কৃষকরা নানা ফসল ফলান। জেলার প্রধান ফসল ধান, মরিচ, আলু, সরিষা, কলা, পাট, আখসহ বিভিন্ন শাক-সবজি। এছাড়া মৌসুমের আগেই জেলার বিভিন্ন মাঠে সারি সারি শিম গাছ, শোভা পাচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, বেগুন, মুলা, করলা, পটল, পালং ও লালশাকসহ হরেক রকমের শীতকালীন সবজির চারা। 

এসব শীতকালীন সবজি ইতোমধ্যে বাজারে তোলা শুরু হয়েছে। আগাম বাজারে উঠায় সবজির দামও ভালো পাচ্ছেন এখানকার কৃষকরা। বগুড়ার উৎপাদিত আলু দেশ ছাড়িয়ে চলতি বছরের ৩০ হাজার মেট্রিক টন বিষমুক্ত আলু নেপাল, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, সৌদ্দি আবর, দুবাইসহ ৮টি দেশে রপ্তানি করা হয়। 

এখানকার উৎপাদিত কাচা সবজির মহাস্থান হাটে কেনাবেচা হয়। দেশে রাজধানীসহ বিভাগীয় শহর থেকে পাইকারগণ এ মহাস্থান হাটে এসে সবজি কিনে নিজ শহরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে থাকেন। জেলার যুমনা নদীর অববাহিকা উপজেলা ধুনট, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা বালু মাটিযুক্ত জমিতে উৎপাদিত কাচা মরিচ দেশজুড়ে নাম কুড়িয়েছে। এখানকার লাল মরিচের ঝাল বেশি হওয়ায় প্রতি মৌসুমে দেশে মসলা বাজারজাতকারী বড় বড় প্রতিষ্ঠান বগুড়া থেকে মরিচ কিনে নিয়ে যায়। জেলার উত্তরের শিবগঞ্জ ,সোনাতলা, ও গাবতলী উপজেলায় অন্যান্য কৃষি ফসলের পাশাপাশি কলা ও আখ চাষাবাদ করে থাকেন এখানকার কৃষকরা।

বগুড়া জেলার কৃষি ফসলের পাশাপাশি বাণিজ্যকভাবে কাহালু ও আদমদিঘী উপজেলায় পুকুরে বিভিন্ন জাতের মাছ চাষাবাদ হয়ে আসছে। এখানকার বিভিন্ন জাতের মাছ ও পোনা বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। 

শাজাহানপুর উপজেলার শাহনগর গ্রামের কৃষক সাইদুজ্জামান তারা জানান, প্রতিবছরের মতো এ বছর ৪ বিঘা জমিতে আগাম সবজি চাষ করেছেন। সবজি চাষে তুলনামূলকভাবে মূলধনও কম লাগে। একটু বেশি পরিচর্যা করতে হয়। রোগবালাই দমনে সবজিতে কীটনাশক বেশি প্রয়োগ করতে হয়। খুব কম সময়েই বিক্রি উপযোগী হয়ে ওঠে। প্রায় দিনই বাজারে  বিক্রি করা যায়। পরিবারের চাহিদাও মেটানো সম্ভব হয়। জমিতে সবজি থাকা পর্যন্ত প্রত্যেক কৃষকের হাতে কম-বেশি টাকা থাকে। যা অন্য ফসলের বেলায় সম্ভব নয়। এছাড়া চলতি মৌসুমে সবজির দামও বেশ ভালো।

ফুলকপি

কাহালু উপজেলার মাছ চাষী সাইফুল ইসলাম জানান, ৪ বিঘা জমির দুটি পুকুরে প্রায় সারাবছর বিভিন্ন জাতের মাছ চাষাবাদ করে আসছে। এছাড়া মাছের পোনা উৎপাদন করে গত কয়েক বছর জেলা পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ মাছ চাষী হিসেবে পুরস্কার পেয়েছি। গত ১০ বছর ধরে এখানকার কুচে মাছ বিদেশে রপ্তানি হয়ে আসছে। 

গাবতলী উপজেলার কৃষক এরশাদ আলী জানান, বর্তমানে মুলা জমিতে লাগানো হচ্ছে। এরপর আলু লাগানো হবে। এরপর আবার মুলা হবে তারপর একই জমিতে করলা লাগানো হবে। 

মহাস্থান হাটের চাষী আলহাজ্ব আজিজার রহমান জানান,  উৎপাদন ভালো হয়েছে , চাহিদাও ভালো এবং বাজারে দামও পাচ্ছি। আলীম উদ্দিন জানান, ফুলকপি প্রতি মণ ২২শ টাকা, করলা ১৪ শ, মুলা প্রতি মন ১২ শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

বেগুন

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দুলাল হোসেন জানান, জেলায় ২৪ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে সারাবছর এখানকার কৃষকরা নানা ফসল চাষাবাদ করে থাকে। চলতি বছর বগুড়ায় আগাম জাতের শীতকালিন সবজি চাষ হয়েছে ২ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে। যা থেকে আগাম শীতকালীন প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যাবে। আগাম শীতকালীন সবজির চাষ আরো বাড়বে। গত বছর ৩ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আগাম সবজি চাষ করেছিলেন চাষিরা। তা থেকে গত বছর প্রায় ৫৪ হাজার মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যায়। বগুড়ায় চাষকৃত সবজি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়ে থাকে। এখানকার উৎপাদিত সবজি রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলো বিক্রি হচ্ছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বগুড়া অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সরকার শফি উদ্দীন আহমদ জানান, বগুড়া একটি কৃষি সমৃদ্ধ জেলা। এখানকার মাটি বেশ উর্বর এবং কৃষকরা খুব পরিশ্রমী। তারা সারাবছর নিবিড় ফসল উৎপাদনে নিয়োজিত থাকে। বগুড়ায় উৎপাদিত ফসলের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য মধ্যে ধান, সবজি, মরিচ, আলু এবং ইদানিং অনেক ফলের বাগান হচ্ছে। বগুড়ার ফসল বিশেষ করে রোপা আমন, বোরো ধান উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণ উৎপাদন হয় যা প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। চরাঞ্চলের অনেক ভালো মান সম্মত মরিচ চাষাবাদ হয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের সবজিও চাষ হচ্ছে। আলু বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় বগুড়া জেলায়। এখানকার আলু বর্তমানে বিদেশে রপ্তানি করা হয়।

আলমগীর হোসেন/আরকে