বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা কারণে টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এতে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার তাঁত শ্রমিক। দিন যত যাচ্ছে ততই নিঃস্ব হওয়ার তালিকা লম্বা হচ্ছে। তাই সরকারি নজরদারি ও আর্থিক সহায়তা দাবি করেছেন তাঁত মালিক-শ্রমিকরা। 

জানা গেছে, জেলার বাসাইল উপজেলার বাথুলি সাদী গ্রামটি শাল চাদরের গ্রাম হিসেবে পরিচিত। তবে দিন দিন এই শিল্প বিলীন হচ্ছে। ৩ বছর আগে প্রায় সহস্রাধিক তাঁত ছিল। কিন্তু লোকসানের কারণে প্রায় ৭০০ তাঁত কারখানা বন্ধ হয়েছে। পাশাপাশি ভারতের শাল চাদরের চাহিদা এবং কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই শিল্পের মালিকরা লোকসানে পড়েছেন। 

আরও জানা গেছে, গত বছর করোনার কারণে তাঁত মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। ফলে তারা তাঁতকলগুলো বিক্রি করে দেন। এছাড়া অনেক তাঁত মালিক ঋণগ্রস্ত হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। তারপরও এবার শীত মৌসুমে উষ্ণতা দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন টাঙ্গাইলের শাল প্রস্তুতকারী তাঁত মালিক ও শ্রমিকরা। তবে অস্বাভাবিকভাবে সুতা ও অন্যান্য কাঁচামালের দাম বাড়ায় আশানুরূপ লাভ হচ্ছে না। এ কারণে তারা সহজ শর্তে ঋণ সুবিধাসহ সরকারি সহায়তার দাবি জানান।

সরেজমিনে জেলার বাসাইল, কালিহাতী ও দেলদুয়ারে দেখা যায়, বাহারি ডিজাইনের চাদর প্রস্তুত করছেন তাঁতিরা। মনের মাধুরি মিশিয়ে মনিপুরি, হাই চয়েজ, নয়ন তারা, ব্লক প্রিন্টসহ প্রায় ২৫ রকমের চাদর তৈরি করছেন। শীত যত বেশি হবে তাঁত মালিকদের ব্যবসা তত বাড়বে। তাই তারা অপেক্ষা করছেন হাড় কাঁপানো শীতের। শীতের তীব্রতা বাড়লে দীর্ঘ কয়েক মাসের মজুত করা চাদর বিক্রি করতে পারবেন তারা।

তাঁত শ্রমিকরা জানান, আগের মতো শাল চাদরের চাহিদা নেই। মালিকরাও চাদর বানিয়ে বিক্রি না করায় লোকসানে পড়েছেন। শ্রমিকদেরও বেতন খুবই কম। কম বেতনে সংসার চলতে চায় না। তারপরও অন্য কোনো পেশায় অভিজ্ঞতা না থাকায় বাধ্য হয়ে কাজ করতে হয়।

নারী তাঁত শ্রমিক সোমেলা (৬৫) বলেন, সপ্তাহে ৯শ টাকা মজুরি পাই। তাই দিয়ে চারজনের সংসার চালাতে হয়। এই বয়সে শরীর আর চলে না। ৫ লাখ টাকা সুদে নিয়ে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছিলাম। এখনো সুদের টাকা পরিশোধ হয়নি। খুবই কষ্টে দিন চলছে। 

বাথুলি গ্রামের তাঁত মালিক ইমান আলী বলেন, আগের মতো এখন আর শীত নেই। ফলে শীতের চাদর উৎপাদন করেও লোকসান গুনতে হচ্ছে। অনেকেই নিঃস্ব হয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। লোকসানে পড়ে এলাকার অনেকেই বিদেশমুখী হচ্ছেন। তাই এই শিল্পকে বাঁচাতে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।  

অভিজিৎ ঘোষ/এসপি