শহীদ নূর হোসেন দিবসে বক্তারা
নূর হোসেনের স্বপ্নের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি
‘বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে শ্রমজীবী মানুষের অংশগ্রহণ ছিল সবচেয়ে বেশি। শহীদ নূর হোসেন সেই শ্রমজীবী মানুষের উত্তরাধিকারী। নূর হোসেন যে স্বপ্ন দেখে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন সত্যিকার অর্থে তার স্বপ্নের সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।’
বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষ্যে বরিশাল জেলা গণতান্ত্রিক কাউন্সিলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বিকেল ৫টায় বরিশাল প্রেস ক্লাবের সাংবাদিক মাইনুল হাসান মিলনায়তনে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল জেলা শাখার সংগঠক হুজাইফা রহমানের সঞ্চালনায় সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায়, লেখক মুস্তাফিজুর রহমান পিন্টু, শহীদ নূর হোসেনের ভাগ্নে ও ঢাকা পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক সৈয়দ মেহেদী হাসান, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুজয় শুভ প্রমুখ।
বিজ্ঞাপন
উন্মেষ রায় বলেন, নূর হোসেনের মৃত্যুর আগে গণতন্ত্র ছিল না। তার মৃত্যুর পরও আমরা গণতন্ত্র পাইনি। গণতন্ত্র হচ্ছে শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে মানুষের সর্ম্পক কিভাবে নির্ধারিত হবে সেটা। একজন শ্রমিক বা কৃষক যদি কোথাও অপমৃত্যুর শিকার হন তখন আমরা সোচ্চার হই না। অথচ একজন শিক্ষার্থী কিংবা পেশাজীবী হলে সোচ্চার হই। আমরা যারা মধ্যবিত্ত তারা বিপ্লব সংগ্রামের কথা বলি কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপোসের জায়গায় যেতে হয়। কিন্তু কার্ল মার্কসের কথায় যদি বলি, যারা সর্বহারা তাদের শৃঙ্খল ছাড়া কিছুই হারানোর নেই। নূর হোসেন সেই সর্বহারা শ্রেণির প্রতিনিধি। নূর হোসেন যে দলের কর্মী ছিলেন সেই দলের প্রধান এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। মিছিলের আগে তিনি নূর হোসেনকে দেখে বারবার বলেছিলেন তার বুকের ও পিঠের লেখা ঢেকে ফেলতে। কিন্তু নূর হোসেন তা করেননি। কারণ নূর হোসেন গণতন্ত্রের স্বপ্নমুখী মানুষ ছিলেন। কিন্তু আজও আমরা নূর হোসেনের সেই স্বপ্নের জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি।
লেখক মুস্তাফিজুর রহমান পিন্টু বলেন, নূর হোসেনের মতো খেটে খাওয়া মানুষরা গণতান্ত্রিক দেশের জন্য অকাতরে জীবন দেয় কিন্তু তাদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে অন্যরা লুটপাট, ভোগ বিলাসে মেতে ওঠে। রাষ্ট্রযন্ত্র জনগণকে বোকা বানিয়ে রাখতে চায়, তা যদি না চাইতো তাহলে লাখো শ্রমিক ও কৃষকের প্রাণপণ লড়াইয়ে যে দেশ স্বাধীনতা অর্জন করলো সেই দেশের সংসদে কেন একজন শ্রমিক প্রতিনিধি থাকবে না? কেন কৃষকের প্রতিনিধি হিসেবে একজন কৃষক সংসদ সদস্য হয়ে সংসদে যাবেন না? রাষ্ট্র যে বিভাজনের তত্ত্বে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায় তার একটি বড় প্রমাণ হলো নূর হোসেনদের আত্মত্যাগকে রাষ্ট্র বেমালুম ভুলে যায়। গণতন্ত্রহীনতা যেভাবে আমাদের মজ্জায় মজ্জায় জেকে বসেছে সেখান থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় নূর হোসেনদের মতো মুক্তিকামী মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যে লড়াই করা।
বিজ্ঞাপন
শহীদ নূর হোসেনের ভাগ্নে, কবি ও গণমাধ্যমকর্মী সৈয়দ মেহেদী বলেন, আমার মামা শহীদ নূর হোসেন নিজের শরীরকে পোস্টার বানিয়েছিলেন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য। গণতন্ত্রের জন্য তাকে জীবন দিতে হয়েছে। কিন্তু নূর হোসেনের এই আত্মত্যাগ আমরা মনে রাখিনি। সর্বক্ষেত্রে যে দুর্নীতি ও নিপীড়ন চলছে তার সমাধান হতে পারে নূর হোসেনের স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। আজকের এই স্বপ্নবাজ তরুণরা একদিন সেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবেই।
ছাত্রনেতা সুজয় শুভ বলেন, গত ৩০ বছরে যারাই বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন হয়েছে তারা প্রত্যেকেই নূর হোসেনের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করেছে। ত্রিশ বছরের ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা নূর হোসেনের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্নকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করেছে। নূর হোসেনরা একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন কিন্তু আজকের দিনের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ অন্যান্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে মানুষের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে যা কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি হতে পারে না।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সদস্য কাজল দাস, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন জেলার সাধারণ সম্পাদক শাফিন আহমেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ নূর হোসেনের প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমজেইউ