দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে শহিদার রহমান/ ছবি ঢাকা পোস্ট

একজন নয়, দু-জন নয়; একই পরিবারের পাঁচজনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। বাবা-মাসহ তাদের তিন সন্তান দৃষ্টিহীন। দৃষ্টিহীন শহিদার রহমান স্থানীয় একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন। আর সেখান থেকে পাওয়া সম্মানী ২ হাজার ১০০ টাকায় চলে এই পরিবার। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের মোক্তারের হাট চরসুভারকুঠি গ্রামে শহিদার রহমানের বাড়ি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ সন্তানের বাবা শহিদার রহমান এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, এক মেয়ে কলেজে পড়ছেন। আর শহিদার (৬২), স্ত্রী আছমা বেগম (৪৫), ছেলে মাছুম বিল্লাহ (১৪), দুই মেয়ে সফিকা সিদ্দিকা (১৬) ও সরিফা খাতুন (১২) জন্মগতভাবেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।

পরিবারের দৃষ্টিহীন পিতাই একমাত্র উপার্জনকারী। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদে মুয়াজ্জিন। মসজিদ থেকে মাসে সম্মানী হিসেবে ২ হাজার ১০০ এবং প্রতিবন্ধী ভাতা ৭৫০ টাকা পান তিনি। এ আয় দিয়ে চলছে না তাদের সংসার। দৃষ্টিহীন শহিদার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কখনো একবেলা খেয়ে আবার কখনো না খেয়ে থাকতে হচ্ছে এ পরিবারের সদস্যদের।

শহিদার রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘‌আমি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। আমার স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। পরিবারে আয় করার মতো কেউ নাই। কেউ সাহায্য-সহযোগিতা করলে কোনোরকম দিন যায়, না করলে দুঃখকষ্টে দিন চলে যায়।’

এক চোখ দিয়ে সামান্য দেখতে পায় তিন ছেলে-মেয়ে/ ছবি ঢাকা পোস্ট

তিনি আরও বলেন, ‘আমার সন্তানদের চোখের অপারেশন করাইছি, তিনজনের একটি করে চোখ একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। আর একটি করে চোখ দিয়ে সামান্য দেখতে পারে। আমি মসজিদ থেকে ২ হাজার ১০০ আর প্রতিবন্ধী ভাতা ৭৫০ টাকা পাই। এ টাকা দিয়ে এত বড় সংসার চালাতে পারছি না।’

কুড়িগ্রাম সদর হলোখানা ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. উমর ফারুক বলেন, চরসুভারকুঠি গ্রামে শহিদার পরিবারের পাঁচজনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, খুব কষ্ট করে চলছে তাদের সংসার। সরকারি যেকোনো সুযোগসুবিধা পেলে তাকে দেওয়ার চেষ্টা করি। আর আমার কাছে যেকোনো সমস্যা নিয়ে আসলেই সমাধান করে দেই।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, ২০১৮ সালে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারটিকে আধা পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার সহায়তাও করা হয়।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই দৃষ্টিহীন পরিবারের সবাইকে ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। সবাই নিয়মিত ভাতা পাচ্ছেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ওই দৃষ্টিহীন পরিবারটির ব্যাপারে জানা নেই। আমার জানা মতে, জন্মগতভাবে এমনটা হওয়ার কথা নয়।

এমএসআর