বাবা-ভাই-বোন নেই, মাকে একা করে চলে গেলেন রাহুলও
জয়পুরহাট রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় চলন্ত সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে প্ল্যাটফর্মে নামার সময় নিচে পড়ে মারা গেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থী রুহুল ইসলাম (২৩)। শুক্রবার (১১ নভেম্বর) ভোর ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
রাহুল খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্বিবদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জ পৌরসভার কালীপাড়া গ্রামে। ওই গ্রামের মৃত শাহরিয়ার রইচ ও রাবেয়া দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
রেলওয়ে থানার পুলিশ ও স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, রাহুল খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে চিলাহাটীগামী আন্তঃনগর সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে চ বগির টিকিট কেটে ঈশ্বরদী পর্যন্ত আসেন। এরপর ঈশ্বরদী থেকে ঞ বগির টিকিট সান্তাহার স্টেশন পর্যন্ত নেন। রাহুলের জয়পুরহাট স্টেশনে নামার কথা ছিল। ভোর ৪টার দিকে ট্রেন জয়পুরহাট স্টেশনে পৌঁছালে রাহুল ঘুমিয়ে থাকার কারণে বুঝতে পারেননি। যখন ট্রেন ছেড়ে যায় রাহুল ঠিক পেয়ে দ্রুত নামতে গিয়ে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে।
এদিকে ট্রেনটি এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম অতিক্রম করার পর তার লাশ দেখতে পায় লোকজন। লাশের সঙ্গে একটি কাপড়ের ব্যাগ ও মুঠোফোন পড়েছিল। ব্যাগে জাতীয় পরিচয়পত্র ও মুঠোফোন নম্বরের সূত্র ধরে পরিবারে খবর দেওয়া হয়। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পরিবারের সদস্যরা রেলস্টেশনে এসে লাশটি রাহুলের বলে শনাক্ত করেন।
বিজ্ঞাপন
সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী মাজেদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি জ বগির যাত্রী ছিলাম। ছেলেটি কত নম্বর বগিতে ছিল তা বলতে পারব না। আমিও খুলনা থেকে আসছিলাম, পাঁচবিবিতে আমার বাড়ি। জয়পুরহাট স্টেশন থেকে ট্রেনটি চলে যাওয়ার পর দেখি লাইনের ওপর একজনের লাশ পড়ে আছে। তাৎক্ষণিক বিষয়টি পুলিশ ও স্টেশন কর্তৃপক্ষকে জানাই।
রাহুলের চাচাতো ভাই রবিউল ইসলাম রকি বলেন, রাহুলের আর কোনো ভাই-বোন নেই। সে বাবা-মার একমাত্র সন্তান ছিল। তার বাবা মারা গেছেন। এখন শুধু মা রয়েছে। তিনি একা হয়ে গেলেন।
রাহুলের বড় চাচা মামুনুর রশিদ বলেন, রাহুল খুলনাতে পড়াশোনা করত। ওখানে সে ফুফুর বাড়িতে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেত। মাঝে মাঝে বাড়িতে আসত। আমরা তাকে একা যেতে দিতাম না। কয়েক মাস আগে সে বলে আমি একা চলাচল করতে পারব। ছুটিতে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু আর বাড়ি ফেরা হলো না।
সান্তাহার রেলওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুক্তার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, চলন্ত ট্রেন থেকে দ্রুত প্লাটফর্মে নামতে গিয়ে ট্রেনের নিচে পড়ে রাহুল ঘটনাস্থলেই মারা যায়। ঘটনাস্থলে উপ-পরিদর্শককে পাঠানো হয়েছে। তিনি গিয়ে বিস্তারিত জানার পর প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চম্পক কুমার/এসপি