২০১৮ সালে বরগুনা সদর হাসপাতালের ২৫০ শয্যার নতুন ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত হাসপাতালের নবনির্মিত ভবনটি চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, জনবল সংকট ও অবকাঠামোর অভাবে চালু করা যাচ্ছে না নতুন ভবন। ফলে পুরোনো ভবনে শয্যা সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপকূলের মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থার বেহাল দশা দেখে ২০১০ সালে হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৩ সালে গণপূর্ত বিভাগ ৩১ কোটি ৩১ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৭ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আ. খালেক এন্টারপ্রাইজকে নতুন হাসপাতাল ভবন নির্মাণকাজের কার্যাদেশ দেয়। এরপর এখানে ছয়তলা একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই হাসপাতালের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন করেন। তবে উদ্বোধনের ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও হাসপাতালের নবনির্মিত ভবন চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তাই আগের মতো পুরোনো ভবনে ভোগান্তি নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বরগুনার ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের আন্তঃবিভাগ ও বহিঃবিভাগে রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। পা ফেলার মতো জায়গা নেই। পুরুষ-মহিলা ওয়ার্ডেও রয়েছে শয্যা সংকট। শয্যা না থাকায় হাসপাতালের মেঝেতে জায়গা করে নিয়েছেন রোগীরা। এমনকি ভেতরে জায়গা না থাকায় চলার পথে অবস্থান নিয়েছেন তারা।

কিরণ মিয়া নামে চিকিৎসা নিতে আসা একজন বলেন, হাসপাতালের বহিঃবিভাগে গলা ও বুকে ব্যথার জন্য ডাক্তার দেখাতে এসেছি। কিন্তুু হাসপাতালে এসে আমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছি। এই ঘিঞ্জি পরিবেশে চরম অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে।

মিহির কান্তি, শরীফ মিয়া, আলতাফসহ হাসপাতালে ভর্তি কয়েকজন রোগী বলেন, হাসপাতালের বেড সব সময় ভরা থাকে। তাই হাসপাতালের মেঝেতেও চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। অসহ্য গরম আর শব্দ দূষণে অতিষ্ঠ রোগীরা।  

চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিদিন ২০০-২৫০ রোগী ভর্তি থাকে হাসপাতালে। শয্যা না থাকার কারণে ভর্তি রোগীদের হাসপাতালের মেঝে, বারান্দায় করিডোরে বিছানা করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ২০১৮ সালে তালতলীতে এক জনসভায় সদর হাসপাতালে বহুতল নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পাঁচ বছর পরেও চিকিৎসা চালু হয়নি জেলার ১২ লাখ মানুষের জন্য নিমিত বরগুনা সদর হাসপাতালের নতুন ভবনে। 

বরগুনা সদর হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ড. মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, ২০১৮ সালে নতুন ভবন উদ্বোধন হওয়ার পর গত বছর জুনে গৃহায়ণ ও গণপূত অধিদপ্তর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ভবন হস্তান্তর করেন। ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা চালুর জন্য দরকার ৫৫ জন চিকিৎসক, ১০১ জন নার্সসহ মোট ২৩৩ জনের জনবল। এর মধ্যে ১০৩ জনের পদ শূন্য। এ ব্যাপারে বার বার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছি, তবুও কোনো কাজই হচ্ছে না।

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাাতালের ভবনটি প্রয়োজনীয় জনবল কাঠামো এবং চিকিৎসা যন্ত্র, বেড, অবকাঠামো না থাকার কারণে চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। আমরা প্রতি মাসে রেজুলেশন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে চিঠি দিচ্ছি। 

এসপি