টাঙ্গাইলে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে টাঙ্গাইল ডায়াবেটিক হাসপাতালে কার্ডধারী রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৩ হাজার ৪৫৯ জন। কার্ড ছাড়াও অসংখ্য রোগী প্রতিদিন এই হাসপাতাল চিকিৎসা নেন। তবে এই রোগীদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন মাত্র সাতজন চিকিৎসক।
 
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৭ সালে সমিতির মাধ্যমে টাঙ্গাইল ডায়াবেটিক হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। এতে সেসময় জেলার বিভিন্ন গ্রামের ৪০৮ জন ব্যক্তি শহরের সাবালিয়া এলাকায় হাসপাতালটি নির্মাণ করতে তৎকালীন জেলা প্রশাসককে সহায়তা করেন। পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক এই হাসপাতালটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ১৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির হাসপাতালটিতে চিকিৎসক দেখাতে কোনো রোগীর টাকা লাগে না। 

তবে ডায়াবেটিস পরীক্ষা (জিটিটি) করতে নেওয়া হয় ৩৫০ টাকা। কার্ডধারী (বই) রোগীর ব্লাড সুগার পরীক্ষা করতে প্রতিবার দিতে হয় ১৪০ টাকা করে। এ ছাড়াও কার্ড না থাকলে প্রতি পরীক্ষায় দিতে হয় ১৭০ টাকা। হাসপাতালে বই নিতে লাগে ১০০ টাকা এবং রেজিস্ট্রেশনের জন্য ৮০ টাকা। এসব রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে সাতজন চিকিৎসক রয়েছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

জানা গেছে, টাঙ্গাইল ডায়াবেটিক হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী আসেন চিকিৎসা নিতে। এদের মধ্যে কার্ডধারী ছাড়াও রয়েছেন ১০০ জনেরও বেশি রোগী। গত ৫ বছরে হাসপাতালে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ১৫ হাজারের অধিক। এর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে গ্রামপর্যায়ে ডায়াবেটিস রোগীদের হাসপাতালমুখী এবং সচেতন করতে কোনো ক্যাম্পেইন নেই। ফলে গ্রামপর্যায়ের এসব রোগী চিকিৎসার মান উন্নয়ন ও হাসপাতালমুখী করতে উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানান।

কালিহাতীর এলেঙ্গা থেকে আসা ডায়াবেটিক রোগী আব্দুস সোবহান বলেন, আমার বাবা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আমারও রোগটি ধরেছে। টাঙ্গাইল ডায়াবেটিক হাসপাতালে রেজিস্ট্রেশন করে কার্ড সংগ্রহ করেছি। এতে কিছু টাকা খরচ কমে গেছে। এখানেই চিকিৎসা চলছে। মাসে ওষুধ ও বিভিন্ন পরীক্ষা করতে দুই হাজার টাকা খরচ হয়।

কালিহাতী উপজেলার বল্লা গ্রামের বাসিন্দা জাহানারা বেগম বলেন, ২০ বছর ধরে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। টাঙ্গাইল ডায়াবেটিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। এর আগে ঢাকার বারডেমসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। গরিব মানুষের যেন এই রোগ না হয়।

ভূঞাপুর থেকে আসা রনি শেখ বলেন, ২০১৫ সাল থেকে এই হাসপাতাল থেকে কার্ডধারী হিসেবে চিকিৎসা নিচ্ছি। আমার মাও কার্ডধারী ডায়াবেটিক রোগী। সেখানে পরিবেশ বা চিকিৎসাসেবার মান ভালো আছে। তবে গ্রামপর্যায়ে আরও প্রচারণার জন্য ক্যাম্পেইন করা প্রয়োজন। অন্যদিকে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।

টাঙ্গাইল ডায়াবেটিক হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম মোল্লা বলেন, হাসপাতালটি সমিতির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। হাসপাতালটিতে সাতজন চিকিৎসকসহ মোট ৩৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করছেন। ডায়াবেটিকে আক্রান্ত হয়ে কতজন মৃত্যুবরণ করেছে সেটার কোনো তথ্য রাখা হয় না। টিকেটের মাধ্যমে এবং রশিদ দিয়ে টাকা নেওয়া হয়। প্রতিদিনের টাকা জেলা প্রশাসকের হিসাব নম্বরে জমা হয়। পরে সেখান থেকে হাসপাতালের চিকিৎসকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও হাসপাতালের বিভিন্ন জিনিসপত্র ক্রয়ে খরচ করা হয়। 

তিনি বলেন, হাসপাতালে দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালটি সরকারিকরণের জন্য কাজ এগিয়ে চলছে। এটি হলেই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার মান উন্নয়নের পাশাপাশি চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়বে। এতে চিকিৎসা খরচ আরও কমে আসবে।

অভিজিৎ ঘোষ/আরএআর