বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এবার কাপ্তাই লেকের পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। শুকিয়ে গেছে লেকের অধিকাংশ জলাভূমি। এতে খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে মাছ আহরণ কমে গেছে।  

বিগত বছরের তুলনায় মৎস্য আহরণ না হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে এর ওপর নির্ভরশীল জেলে ও ব্যবসায়ীদের। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ড্রেজিং করে লেকের নাব্যতা বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

মহালছড়ি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে কাপ্তাই লেকে মৎস্য আহরণের ওপর নির্ভরশীল জেলের সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। বছরের ৯ মাস মাছ শিকার করেন জেলেরা। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এসব মাছ পাঠানো হয়। তবে চলতি বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় কাপ্তাই লেকে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। শুকিয়ে গেছে কাপ্তাই লেকের একটি বড় অংশ। পানি কম থাকায় কমে গেছে মৎস্য আহরণ। 

মৌসুমের শুরুতে প্রতিদিন ১০-১৫ টন মৎস্য আহরণ হলেও এখন হচ্ছে মাত্র ১-২ টন। এতে বিপাকে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। 

কাপ্তাই লেকের ওপর নির্ভরশীল মৎস্যজীবী লুৎফর রহমান জানান, পানি কমে যাওয়ায় জালে কোনো মাছ পড়ছে না। অন্যান্য বছর এই সময়ে প্রচুর মাছ ধরা পড়ত। এখন কোনো পানি নেই। মাছ না পাওয়ায় আমরা খুব কষ্টে আছি। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।   

মৎস্যজীবী আবু সাঈদ বলেন, হঠাৎ পানি অনেক কমে গেছে। কোনো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এই মৌসুমে পুরো সময় রয়ে গেছে এখনো। আমরা মাছ ধরতে না পারলে খাব কী? ঋণ কীভাবে পরিশোধ করব? নদী খনন না করলে পানি থাকবে না আর আমরা মাছও পাব না। ফলে না খেয়ে থাকতে হবে।

মহালছড়ি থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাছ যায়। এদিকে মৎস্য আহরণ কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। জেলেদের অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখে ব্যবসায়ীরা। কিন্তু মাছ না পাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন তারাও। নদীর নাব্যতা বাড়ানোর দাবি ব্যবসায়ী নেতাদের। 

মহালছড়ি মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো.আবুল খায়ের বলেন, আমরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাছ পাঠায়। তবে এ বছর পানি না থাকায় মাছ কম ধরা পড়েছে। ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কাপ্তাই লেকের নাব্য বৃদ্ধির জন্য ড্রেজিং জরুরি। ড্রেজিং হলে লেকের গভীরতা বাড়বে, মাছও বেশি ধরা পড়বে।

মৎস্য আহরণ কমে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে রাজস্ব ঘাটতি। সরকারের নেওয়া কাপ্তাই লেকে ড্রেজিং প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে মাছের উৎপাদন কমে যাবে বলে জানিয়েছে মহালছড়ি মৎস্য আহরণ উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসরুল্লাহ আহমেদ। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কয়েক বছর বৃষ্টিপাত কমে গেছে। মৎস্য আহরণ বাড়াতে হলে কাপ্তাই লেক ড্রেজিংয়ের যে প্রকল্প সরকার নিয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। 

তিনি আরও জানান, চলতি মৌসুমে মহালছড়ি মৎস্য আহরণ উপকেন্দ্রে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৬৬ লাখ টাকা। 
 
জাফর সবুজ/এসপি