অসুস্থ স্বামী আর চার সন্তানকে রেখে সংসারের অভাব ঘুচিয়ে স্বচ্ছলতা ফেরাতে মালদ্বীপে পাড়ি জমিয়েছিলেন আছিয়া বেগম (৪৫)। তিনি মালদ্বীপের রাজধানী মালের মাফান্নু এলাকার একটি বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। চলতি মাসের ১০ নভেম্বর আগুনে পুড়ে মারা যান আছিয়া। শুধু আছিয়াই নয় সেই আগুনে পুড়ে ওই বাড়িতে থাকা আরও ১০ শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

নিহত আছিয়া বেগম টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার ধোপাখালী ইউনিয়নের পীরপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী। ২০১০ সালে শ্রমিক ভিসায় মালদ্বীপে যায় আছিয়া বেগম। সুখের নাগাল পাওয়ার আগেই আছিয়া তার স্বপ্ন নিয়ে পুড়ে মারা গেলেন মালদ্বীপের ভয়াবহ আগুনে।

জানা যায়, অপ্রাপ্ত বয়সে দিনমজুর ইসমাইলের সঙ্গে বিয়ে হয় আছিয়া বেগমের। বিয়ের কয়েক বছর পর আছিয়ার স্বামী ইসমাইল হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বামী অসুস্থ থাকায় দিনমজুরের কাজ শুরু করেন আছিয়া বেগম। তারপরও সংসার না চলায় একপর্যায়ে আছিয়া এক লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ করে ২০১০ সালে শ্রমিক ভিসায় মালদ্বীপে যান। সেখানে তিনি  গৃহকর্মীর কাজ নেন। দীর্ঘ এই সময়ে স্বামীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে পারেননি। তবে চার ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিতে পেরেছেন। দুই ছেলে বিয়ে করার পর পৃথক হয়ে যান। বর্তমানে আছিয়ার বড় ছেলে রিকশাচালক ও ছোট ছেলে ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। ছেলেরা পৃথক হওয়ায় স্বামীর দেখাশোনা করতে আছিয়া তার দুই মেয়ে ও মেয়েদের জামাইদের বাড়িতেই রেখেছেন। গত ১০ নভেম্বর মালদ্বীপ থেকে মেয়ে নুর নাহারের মোবাইলে কল আসে। এতে তাকে মায়ের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। তখনই থমকে যান মেয়ে নুর নাহার।

মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে মৃত আছিয়া বেগমের মেয়ে নুর নাহার মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাবা অসুস্থ। আমাদের মানুষ করার জন্য মা মালদ্বীপে যান। তার স্বপ্ন ছিল বাবার চিকিৎসা ও পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরানোর। কিন্তু আমার মায়ের স্বপ্নটা মালদ্বীপের আগুনে পুড়ে গেছে। কখনও ভাবিনি এভাবে মায়ের মৃত্যু হবে। মায়ের স্বপ্নটা আর পূরণ হলো না। আজ সকালে খবর পেয়েছি মায়ের মরদেহ দেশে আসবে। তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে বিমানবন্দরে এসেছি মায়ের মরদেহ নিতে। এর আগেও মাকে কয়েকবার বিমানবন্দর থেকে নিয়ে গেছি কিন্তু এবার শেষবারের মতো মায়ের মরদেহ নিতে এসেছি।

আছিয়া বেগমের মেয়ের জামাই আপন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শাশুড়ির মরদেহ নিতে ঢাকার বিমানবন্দরে এসেছি। সকল প্রক্রিয়া শেষে সন্ধ্যার মধ্যেই হয়তো মরদেহ আমাদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

আছিয়া বেগমের ছোট ভাই তাজমল হোসেন বলেন, অল্প বয়সে আমার বোনকে বিয়ে দিয়েছিলাম। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই তার সংসারে অভাব-অনটন নেমে আসে। স্বামী অসুস্থ হওয়ার পর থেকে বোনটি নিজেই দিনমজুরের কাজ করতো।

ধনবাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসলাম হোসাইন বলেন, মালদ্বীপে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া আছিয়া বেগমের পরিবারকে সহায়তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে তার পরিবারকে সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে।

অভিজিৎ ঘোষ/এমজেইউ