এতোদিন এরশাদপত্মী ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের মধ্যে দ্বন্দ্ব সীমাবদ্ধ ছিল বক্তব্যের মধ্যেই। সেই দ্বন্দ্ব এবার ছড়িয়ে পড়েছে মাঠের রাজনীতিতেও। কেননা, ময়মনসিংহে আগামী ১৯ নভেম্বর একই স্থানে এবং একই সময়ে কর্মসূচির ডাক দিয়েছে দলের দুটি গ্রুপ। দুই পক্ষের ডাকা সম্মেলনকে ঘিরে জাপার রাজনীতিতে এখন বইছে উত্তাপ। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ছাড় দিতে নারাজ দু'পক্ষই। 

দলীয় সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যু এবং তার স্ত্রী ময়মনসিংহ সদর আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য রওশন এরশাদের অসুস্থতার কারণে জিএম কাদের দলের চেয়ারম্যান হওয়ায় জাতীয় পার্টির উচ্চ পর্যায়ে বিভেদ সৃষ্টি হয়। এর প্রভাব পড়েছে ময়মনসিংহ জাতীয় পার্টিতেও। এজন্যই রওশন এরশাদ এবং জিএম কাদের পক্ষের নেতাকর্মীরা আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

আগামী ১৯ নভেম্বর গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে প্রধান অতিথি করে রওশন এরশাদের বাসভবনের (সুন্দরী মহল) পাশে টাউনহল মাঠে দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত রওশন অনুসারীরা কাদেরপন্থীদের কুশপুত্তলিকা দাহ করে কর্মসূচি প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে টাউনহল প্রাঙ্গণে তাদের কর্মী সম্মেলন সফল করার ঘোষণা দেয়া হয়। যেখানে প্রধান অতিথি করা হয়েছে বেগম রওশন এরশাদকে। 

রওশন এরশাদপন্থী ময়মনসিংহ মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ডা. কে আর ইসলাম বলেন, জাতীয় পার্টি মানেই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং তার স্ত্রী রওশন এরশাদকে সবাই বুঝে থাকেন। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে ময়মনসিংহ জাতীয় পার্টির সব নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ। আগামী ১৯ নভেম্বর সমাবেশ সফল করতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

রওশনপন্থী ময়মনসিংহ মহানগর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আব্দুল আওয়াল সেলিম বলেন, যারা এতোদিন রওশন এরশাদকে ব্যবহার করে সুযোগ সুবিধা নিয়েছে তারা জিএম কাদেরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রওশন এরশাদের বাসার সামনে সম্মেলন করতে চাচ্ছে। তাদের এ স্বপ্ন কোনোদিন পূরণ হবে না। কার কেমন শক্তি সমর্থন আছে সেটা ১৯ নভেম্বরই দেখা যাবে। 

অপরদিকে, কাদেরপন্থী জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ফখরুল ইমাম এমপি বলেন, দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরদের নির্দেশে দেশের বিভিন্নস্থানে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেই অনুযায়ী ময়মনসিংহেও সম্মেলনের সময় ও স্থান ঠিক করা হয়েছিল এক মাস আগেই। এরপরও আরেকটি পক্ষ একইস্থানে কর্মসূচি কেন দিলো সেটি আমরা বুঝতে পারছি না। কিন্তু আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি। টাউনহলের বদলে রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্ত্বরে সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। 

তবে কৃষ্ণচূড়া চত্ত্বরে সম্মেলনের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি জানান, রওশন এরশাদপন্থীকে টাউনহল মাঠ এবং কাদেরপন্থীদের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠটি ব্যবহার করার জন্য মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। 

এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঁঞা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সম্মেলনে অনুমতির ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। 

উবায়দুল হক/এমএএস