ডিলারের কাছ থেকে জিংক সালফেট সার কিনে জমিতে প্রয়োগ করেন কৃষকরা। তবে তা কোনো কাজে আসেনি। সার প্রয়োগের এক দিন পরই তা গলে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। কয়েকবার এমন ঘটনা ঘটলে সন্দেহ হয় কৃষকদের। যাচাই-বাছাই করে দেখা যায় জিংক সালফেট নয়, সেগুলো ছিল মাটি। এরপর কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার শরণাপন্ন হন। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে জিংক সালফেট সারের নামে মাটি মিশিয়ে বিক্রি করার দায়ে এক ডিলারকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এ কারাদণ্ড দেওয়া হয়। গোমস্তাপুর উপজেলার দলদলী ইউনিয়নের মুশরীভূজা-জামতলা বাজারের মেসার্স ভাই ভাই রকমারি স্টোরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। 

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম। মেসার্স ভাই ভাই রকমারি স্টোরের মালিক ও সারের ডিলার আলহাজ মো. দুরুল হোদার ছেলে  মো. আখতারুলকে এ কারাদণ্ড দেওয়া হয়। 

স্থানীয় কৃষক আব্দুল গনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোলাহাট কৃষিপ্রধান এলাকা। এখানে আম, ধানসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করেন কৃষকরা। জিংক সালফেট সারের নামে তাতে মাটি মিশিয়ে বিক্রি করতেন দুরুল হোদা। কৃষকরা প্রতারিত হওয়ায় বাধ্য হয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কৃষি বিভাগকে বিষয়টি জানান। ধানে সার দেওয়ার পর কোনো কাজ হচ্ছিল না দেখেই সবার সন্দেহ হয়। 

স্থানীয় যুবক জাহাঙ্গীর আলম জানান, ১৫-২০ বছর আগেও একই অভিযোগে তার শাস্তি হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরেই কৃষকদের সঙ্গে দুরুল হুদা এমন প্রতারণা করে আসছিলেন। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের নিকট তার ডিলারশিপ বাতিল করার অনুরোধ করা হয়েছে। 

বুধবার (১৬ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শ্রী ভাদু কর্মকার সার কেনার পর প্যাকেট খুলে দেখতে পান, সারের পরিবর্তে প্যাকেটে মাটি ভর্তি। একপর্যায়ে দুরুল হোদার ছেলে আকতারুল ইসলাম ও কর্মচারীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। পরে স্থানীয় জনসাধারণ ক্ষিপ্ত হয়ে দোকানে বসা আকতারুল ও কর্মচারীর ওপর চড়াও হন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কৃষক ও স্থানীয় জনতার প্রতি আহ্বান জানান। 

দলদলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক চুটু জানান, ডিলার দুরুল হোদা দীর্ঘদিন থেকে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। বুধবার সার বলে মাটি বিক্রি করে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক উম্মে তাবাসসুম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আখতারুলকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। জালিয়াতি প্রমাণিত হওয়ায় ও কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে সভা করে দুরুল হোদার সারের ডিলারশিপ বাতিলের জন্য সুপারিশ করা হবে।

জাহাঙ্গীর আলম/আরএআর